ঠিকানা: রিজেন্ট পার্ক
কার্যকাল: ১৯৩২- ষাটের দশক
প্রথম ছবি: যমুনা পুলিনে (১৯৩৩)
১৯৩২ সালের জুলাই মাসে বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুন সবাক স্টুডিও ঘোষণা করল, আরসিএ ফটোফোন যন্ত্রের অত্যাধুনিক মডেল আর মিচেল ক্যামেরার আধুনিকতম মডেল নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করছে। অটোমেটিক ডেভেলপমেন্ট মেশিনও ভারতে তারাই প্রথম আনছে। রায়বাহাদুর মতিলাল চামারিয়া অকৃপণ হাতে টাকা ঢাললেন। প্রোপ্রাইটর হলেন বি এল খেমকা। আর প্রোডাকশনের কাজ দেখার জন্য তাঁরা পেলেন ম্যাডানদের অন্যতম স্তম্ভ প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তিনি হলেন স্টুডিওর জেনারেল ম্যানেজার। ম্যাডানদের সঙ্গে বনিবনার অভাব হওয়াতে তার কিছুদিন আগেই ম্যাডান কোম্পানি ছেড়েছেন প্রিয়নাথ। তাঁর সঙ্গেই বেরিয়ে এসেছেন ক্যামেরাম্যান যতীন দাস, শিল্প নির্দেশক বটু সেনরা। এঁরা সবাই যোগ দিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া স্টুডিওতে। খোদ আরসিএ থেকে এলেন শব্দযন্ত্রী উইলম্যান। বাংলা, হিন্দি, উর্দু তিন ভাষাতেই ছবি হয়েছে এই স্টুডিও থেকে। আগা হসার কাশ্মীরি, এ আর কারদার, পৃথ্বীরাজ কাপুর, দুর্গা খোটে কাজ করেছেন এখানে।
আর বাংলা? যমুনা পুলিনে (১৯৩৩), পায়ের ধুলো (১৯৩৫), সোনার সংসারের (১৯৩৬) মতো হইহই ফেলে দেওয়া ছবি ইস্ট ইন্ডিয়া থেকে তখন তৈরি হচ্ছে। তিরিশের দশকে বক্স অফিসের নিরিখে সবচেয়ে বড় হিট ছিল দেবকী বসুর সোনার সংসার-ই (দ্বিভাষিক)। ইন্দুবালা, কমলা ঝরিয়ার মতো শিল্পীকেও পর্দায় প্রথম বার দেখা যায় ইস্ট ইন্ডিয়ার ছবিতেই (যমুনা পুলিনে ১৯৩৩)। প্রিয়নাথের মতো ধীরাজ ভট্টাচার্যও এলেন ম্যাডান কোম্পানি ছেড়ে। যমুনা পুলিনে করার পরেই অবশ্য প্রিয়নাথ নিজের স্টুডিও গড়বেন বলে ইস্ট ইন্ডিয়া ছেড়ে দেন। ১৯৩৭-এর পর বি এল খেমকাও আর থাকেননি। স্টুডিওর ভার নিলেন চামারিয়া নিজেই, যত ক্ষণ না বিশ্বযুদ্ধ এসে সব তছনছ করে দিল। জমকালো সাজসজ্জার জন্য বিখ্যাত ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া। মধু বসুর উর্দু ছবি সেলিমা-র (১৯৪১) জন্য তৈরি হয়েছিল নয়নাভিরাম ফোয়ারা। ইস্ট ইন্ডিয়ার জৌলুস দেখে লোকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকত। সেই স্টুডিও এ বার মিত্রসেনার হাতে চলে গেল। ওখানে সেনাবাহিনীর গাড়ি মেরামতের আস্তানা বসল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে হতশ্রী অবস্থায় স্টুডিও ফেরত পেলেন চামারিয়া। স্টুডিও চালানোর ভার দিলেন মতিমহল থিয়েটার্সের জি সি বোথরা-কে। তার মধ্যে ১৯৫১ সালে একটা ফ্লোর আগুন লেগে পুড়ে গেল। নতুন করে সংস্কার করে আবার চালু হল স্টুডিও। মোটামুটি ভালই কাটল দশটা বছর। কিন্তু ষাটের দশকের গোড়া থেকে পড়ে এল ইস্ট ইন্ডিয়ার ভাগ্য। অত বড় ইমারত পড়েই রইল খাঁ খাঁ। কিন্তু শূন্যস্থান তো প্রকৃতির নিয়মেই থাকার জো নেই। তাই কালক্রমে স্টুডিওকে ঘিরে গড়ে উঠল বসতি। কলকাতা শহরে আশ্রয়প্রার্থীর ঢল কখনও থামে না আর এ শহর কাউকে ফেরায়ও না। ইস্ট ইন্ডিয়া আজ তেমনই এক আশ্রয়স্থল।
পুনশ্চ
আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী প্রথম ভারতীয় ছবির আঁতুড়ঘর কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া স্টুডিও। দেবকী বসুর পরিচালনায় ১৯৩৪ সালের সেই ছবির নাম 'সীতা' (হিন্দি)। অভিনয়ে ছিলেন পৃথ্বীরাজ কাপুর, দুর্গা খোটে প্রমুখ। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জেতে এই ছবি।