আপনাদের কথা

প্রথম পাতা > আপনাদের কথা

আপনার কাছে কি শুটিং দেখার স্মৃতি আছে যা পড়তে লাগে চিত্রনাট্যের মতো? আপনি কি জানেন তেমন কোনও সিনেমাওয়ালার কথা যাঁর পাগলামি হল একই সিনেমা বারবার দেখা?আজ আর নেই এমন প্রেক্ষাগৃহের ছবি বা সেখানে সিনেমা দেখার স্মৃতি কি আপনার আছে?  বিএফএ মনে করে, এই সব গল্প মিলেই আজ বিরাট হয়ে উঠেছে সিনেমা নামের শিল্পটা। সুতরাং দেরি না-করে এই মঞ্চে নিয়ে আসুন আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ছড়িয়ে দিন সারা পৃথিবীর সিনেমাপ্রেমীদের কাছে।

আমাদের মেল আইডি: info@bengalfilmarchive.com



সম্প্রতি  আমাদের স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক বন্ধুর শেয়ার করা একটি ভিডিও বিশুদ্ধ নস্টালজিয়া জাগিয়ে দিল। প্রবীণ অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের একটি সাক্ষাৎকার, যিনি সকলের চোখে আভিজাত্য এবং মাধুর্যের প্রতীক। আমাদের স্কুল, লোরেটো কনভেন্ট আসানসোলের প্রাক্তন ছাত্রী হিসেবে আমাদের কাছে তিনি আরওই স্পেশাল।

শৈশবের কোনও ‘ক্রাশ’ ছিল? জিজ্ঞাসা করা হলে ওই ভিডিওতে  তিনি অকপটে উত্তর দিয়েছেন, ‘‘হ্যাঁ, একটি ছিল।’’ তিনি বলে চলেন, লোরেটো স্কুলের পাশে সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলে উল্ফগ্যাং লাহমেয়ার নামের একটি জার্মান ছাত্রের কথা। লম্বা, সুদর্শন, নীল চোখ।  সাধারণত স্কুলের গেটের কাছে দৃষ্টি বিনিময় এবং স্কুলের সোশ্যালে দেখা করার সুযোগই ছিল একমাত্র আদানপ্রদানের সুযোগ। কয়েক মাস পরে ছেলেটি জার্মানিতে ফিরে যায়।

 আমাদের কাছেও  দু’টি স্কুলের এই সাধারণ গেটটি একটি ল্যান্ডমার্ক, যেখানে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে অনেক মধুর স্মৃতি তৈরি হয়েছিল। শর্মিলার ব্যাচের অন্যরা এ গল্পের বাকি অংশটাও শেয়ার করেছেন। উল্ফগ্যাং-এর অন্তত একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, যার নাম টুবলু দত্ত। দু’জনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ মারামারি হয়েছিল এবং উল্ফগ্যাং টুবলুকে শর্মিলার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছিল। শেষ পর্যন্ত দু’জনের মারামারি থামাতে স্কুলের অধ্যক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হয় এবং টুবলু দার্জিলিং-এর অন্য স্কুলে চলে যায়।

শর্মিলা এবং উল্ফগ্যাং দু’জনেই বার্নপুর সংলগ্ন শহরে থাকতেন। বার্নপুরে একটি সুন্দর পার্ক আছে। উল্ফগ্যাং-এর বাবার নামে নামাঙ্কিত সেই লাহমেয়ার পার্ক বর্তমানে নেহেরু পার্ক হয়েছে। লাহমেয়ার ব্যক্তিগত ভাবে পার্কটির ভিতরকার ভবনের নকশা ও নির্মাণের তদারকি করেছিলেন। ইসকো  প্ল্যান্টের জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন লাহমেয়ার এবং ঘটনাচক্রে ইসকো-তে তিনি আমার বাবার রিপোর্টিং অথরিটি ছিলেন।

ইন্টারভিউ লিঙ্ক: 
https://www.facebook.com/watch/?v=920477850116921
ড. শুভ্রা বিশ্বাস
কালিকাপুর, কলকাতা
আমার বয়স ৯০ পেরিয়েছে , স্মৃতিশক্তি কিন্তু এখনও উজ্জ্বল। বয়সের ধর্মে পুরনো দিনের নানান কথা মনে এসে ভিড় করে। সেই সময় বিনোদনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল সিনেমা। আমাদের মা জেঠিমাদেরও সিনেমার প্রতি ছিল বেশ টান, সপ্তাহে অন্তত একটা সিনেমা দেখা চাইই চাই। তার পর তাই নিয়ে আলোচনা ছিল সময় কাটানোর একটা আনন্দময় অধ্যায়। পারিবারিক সূত্রে চিত্রপরিচালক রাজেন তরফদার ছিলেন আমাদের এক নিকট আত্মীয়। সেই সুবাদে ওঁর এক সিনেমার শুটিং দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। সিনেমার নাম ছিল 'আকাশ ছোঁয়া'। সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন মুখ্য চরিত্রে। একটা গেরুয়া রঙের শাড়ি পরেছিলেন। রোজকার ব্যবহারের শাড়ি,  আটপৌরে  ধরনে পরা। মেকআপও সাধারণ। দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করছিলেন সুপ্রিয়া। দেখলাম কিছু ক্ষণ। তার পর সুপ্রিয়া বলছেন শুনলাম, ''রাজেনদা, আমার মুড নিতে একটু সময় লাগছে।'' শুটিং বন্ধ রইল একটু। বেরিয়ে যেতে যাব, দেখি উত্তমকুমার ঢুকছেন সেটে। ওহ সে কী রূপ! কিন্তু বেরিয়ে যাওয়ার তাড়ায় ছিলাম বলে কথা বলতে পারলাম না। এখনও দেখি ওঁর সিনেমা টিভিতে। এই বয়সে তো হল-এ যেতে পারি না, কিন্তু তাই বলে সিনেমার প্রতি ভালবাসা আমার একটুও কমেনি।
সাগরিকা দত্ত রায়
পিকনিক গার্ডেন,কলকাতা
বেঙ্গল ফিল্ম আর্কাইভ আমার শৈশবের স্মৃতি উস্কে দিল। আমরা থাকতাম কালীঘাটের মহিম হালদার স্ট্রিটে। রবি ঘোষের আদি বাড়ি ওখানেই। রবি এবং অনুভা গুপ্ত, দু’জনকেই খুব কাছ থেকে দেখতে পেতাম। বড় লাল টিপ আর কোঁকড়া চুলে অনুভাকে অসামান্য লাগত। উনি ছোটদের খুব ভালওবাসতেন। তাই আমরা প্রায়ই ওঁদের বাড়ি চলে যেতাম খেলাধুলো করতে। শীতকালের একটা বড় আকর্ষণ ছিল, কালীঘাট হাই স্কুলের মাঠে তারকাদের ব্যাডমিন্টন ম্যাচ। আমাদের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকেই ছিল মাঠটা। শমিত ভঞ্জ, চিন্ময় রায়, রবি ঘোষের খেলা দেখতে ভিড় করতাম। কে জিতল না জিতল বড় কথা নয়, আমাদের কাছে তো সবটাই প্রাপ্তি। আর একটা ঘটনাও মনে আছে। ইন্দিরা সিনেমা হলে সুচিত্রা সেন আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘দত্তা’ ছবির প্রিমিয়ার। সেটা ১৯৭৬ সালের জুন মাস। আমরা ইন্দিরার সামনে পরের শো-এর জন্য দাঁড়িয়ে আছি, ধুতি-পাঞ্জাবি পরে সৌমিত্র বেরিয়ে এলেন। দর্শকের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে সবার সঙ্গে কথা বললেন। আমার মাসিও তার মধ্যে ছিল। এ সব স্মৃতি কোনও দিনই মন থেকে মোছার নয়।
উর্মি বণিক
শেওড়াফুলি
এক ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি— আমি, আমাদের প্রজন্ম। এমনই তো মনে হয়। আর জীবনের দুষ্টচক্রে সেই ধ্বংসের অবশেষ আমাদের ক্রমশ আরও উদ্‌ভ্রান্ত, লক্ষ্যহীন করে তুলছে। সিনেমা হলকে আমরা এখন যে ভাবে দেখি, তাতে সে বিবর্তনের দৌড়ে টিঁকে থাকার লড়াইয়ে এক মরিয়া চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু সেই পরিবর্তনকে কী ভাবে বোধগম্য করে তুলব নিজের কাছে, জানি না সেটা। সিনেমা হলের পর্দা আমাদের সঙ্গে তো সরাসরি কথা বলে না, কিন্তু আমরা আশা করি যে, সে হয়তো উত্তর দেবে। সিনেমার পর্দা আমাদের সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত ঠিকই। কিন্তু আজকাল তাই নিয়ে আমাদের ভাবনাগুলো বড় বেশি বিভ্রান্তিকর অহমিকার চর্বিত চর্বণ। নতুন কল্পনা বা স্বপ্নের ছোঁয়া সেখানে নেই। 
বিলুপ্তির জন্যও কিন্তু একটা আত্মা লাগে। একটা নির্মাণ লাগে। এ কি কোন সচেতন প্রক্রিয়া? না কি দোলাচলতাই বোধহয় আমাদের একমাত্র সম্বল। আমরা বিচ্ছিন্ন হয়েও অতীতের নাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছি, অস্তিত্বের এ এক আশ্চর্য দিক!
আমি হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। কোন সাবেকি সিনেমা হলের সঙ্গেই আমার তেমন ব্যক্তিগত সংযোগ নেই। কিন্তু আমি ম্যাটিনি শো'য়ের অজস্র গল্প শুনেছি আমার মা, ঠাকুমাদের কাছে। পরিবারের সব মহিলাই যৌথ পরিবারের সব কাজ সামলে তখন নিয়মিত সিনেমা দেখতেন... সিনেমা হল তাঁদের জীবনের অংশ ছিল। আমার একমাত্র যোগসূত্র হল এই স্মৃতিগুলো, যেগুলো আমাদের প্রজন্মের প্রাপ্তি। স্মৃতি আবহমান। মনে হয় না এখানে কোন ফাঁক আছে, বরং একটা মজবুত সুতোর বাঁধনে আমরা আবদ্ধ। এখানে এক সময়ে অনেকগুলো হল ছিল— দীপক, গৌরী..., যেগুলো এখন ভূতের বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু লোকে তাদের ঠিকানা বলবার সময় এখনও এগুলোকে ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ব্যবহার করে। এগুলো এখনও যেন গন্তব্য, হয়তো কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নয় তবে এদের অস্তিত্ব সমৃদ্ধ এক অতীতের স্মৃতিতে। তখনকার দিনে, মানুষের রোজকার জীবনযাপনে এই থিয়েটারগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মানুষকে তারা একভাবে গড়েছিল। সেই নস্টালজিয়াই আমাদের সময়ের সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে।
শিবাঙ্গী সিং
উত্তরপাড়া, হুগলি
বেঙ্গল ফিল্ম আর্কাইভ-এর (বিএফএ) ওয়েবসাইটের ‘স্টুডিও’ বিভাগে গেলেই নিমেষের মধ্যে বিগত যুগের এক ঝাঁক স্টুডিওর তালিকা ছেয়ে যাবে গোটা স্ক্রিন জুড়ে। এই অসংখ্য নামের মধ্যে অন্যতম হল ‘অরোরা স্টুডিও’, যা ক্রমশ অরোরা সিনেমার প্রযোজনা এবং পরিবেশন-কেন্দ্রিক ব্যবসা থেকে গড়ে ওঠে। চলচ্চিত্র গবেষক রনিতা চ্যাটার্জীর আলোচনায় উঠে এসেছে নির্বাক ছবির যুগে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ, মালয় এবং বিশ্বের আরও ভিন্ন প্রান্তে ভারতীয় চলচ্চিত্রকে পৌঁছে দেওয়ায় অরোরার বিশেষ ভূমিকা। এতে জাতীয় চলচ্চিত্রের আলোচনায় বম্বের অযাচিত প্রাধান্য কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে পড়ে। একই সঙ্গে এটাও মনে করিয়ে দেয় যে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিবর্তনকে সঠিক ভাবে বোঝার জন্য এই বিরাট বড় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছোট বড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবদানগুলোর কথা মনে রাখা আবশ্যক। এই কাজে সঠিক সময়ে বি.এফ.এ তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বি.এফ.এ তাদের ওয়েবসাইট সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে ২০২৩-এর ১লা বৈশাখে – অর্থাৎ বাংলা নববর্ষে। এই কাজটা কিন্তু বিএফএ করেছে বাঙালিদের সেই কুখ্যাত নস্টালজিয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই। কিন্তু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে তাদের উদ্যোগ নেহাতই সন্ধ্যা-সুচিত্রা-সত্যজিৎ জাতীয় তারকাদের জীবননামা লিপিবদ্ধ করে নিষ্কৃতি কামনা করে না; বরং বহুগুণ উদ্যম নিয়ে বি.এফ.এ তাদের পাঠকদের সারি সারি বিস্মৃতপ্রায় রসায়নাগার ও ফিল্ম সোসাইটির কাছেও নিয়ে যায়। ১৯৬৪ সালে যে আর্কাইভের প্রয়োজনবোধ থেকে ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়ার (এন.এফ.এ.আই) জন্ম, আজ সেই একই আবশ্যকতার সম্মুখীন হয়ে তৈরি হয়েছে বি.এফ.এ। চলচ্চিত্রকার ও গবেষকদের নতুন প্রজন্মের কাছে এই ওয়েবসাইট যেন এক অমূল্য রতন।ডিজিটাল হওয়ার দরুন বহু সংখ্যক মানুষ সহজেই এই আর্কাইভের সদ্ব্যবহার করতে পারবেন। ২০০৩ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এনএফএআই-এর প্রচুর দুর্মূল্য সংগ্রহ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২০০৮ থেকে এনএফএআই-ও ক্রমশ ডিজিটাইজেশনের দিকে পা বাড়িয়েছে। তা বাদে ২০২০-র অতিমারির পর সকলেই আমরা অনলাইন তথ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। বাংলা চলচ্চিত্রের অতীব প্রান্তিক অবস্থানের কারণে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে যে কোন তথ্যের জন্যই বিভিন্ন বেনামি ওয়েবসাইটের আনাচে কানাচে খোঁজ করে বেড়াতে হত – অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহীরা পড়তেন ‘পাইরেট ইকনমির’ হাতে। চলচ্চিত্র গবেষক কুহু তানভিরের দেওয়া এই নাম ব্যাখ্যা করে ১৯৯০ থেকে হঠাৎই বিশালাকার ধারণ করা এক অনিয়মিত অনলাইন সংরক্ষণাগারকে, যা নিজের তাৎপর্যের ব্যাপারে একেবারেই ওয়াকিবহাল নয়। বিএফএ-র ওয়েবসাইট আপেক্ষিক ভাবে বেশ ধীরগতিতেই বেড়ে উঠছে, কিন্তু তার সংগৃহীত প্রতিটা তথ্য পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য।দ্বিভাষিক হওয়ার দরুন বিএফএ দেশি এবং বিদেশি দুই জাতীয় পাঠকদেরই তার আঙিনায় স্বাগত জানায়। শুধুমাত্র ওয়েবসাইটটার বিভাগের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায় বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসকে তার প্র্যাপ্য মর্যাদা দিতে বিএফএ-র প্রচেষ্টা সর্বব্যাপী। ‘চিত্রপঞ্জী’ (নির্বাক ও সবাক), ‘চরিতমালা’, ‘চিত্র প্রতিষ্ঠান’ ও ‘চিত্রগৃহ’ -র বাইরেও ‘তথ্যচিত্র’-র জন্য যে বিশেষ বিভাগ বিএফএ তৈরি করেছে, সেটা আবারও বুঝিয়ে দেয় ভারতবর্ষে এই ধারার চলচ্চিত্রের বহু বিস্তৃত অবহেলার ব্যাপারে এই ওয়েবসাইটের সচেতনতা। অপর দিকে ‘মিস করবেন না’ বিভাগটি হল এক ধরনের মেটা-আরকাইভ, অর্থাৎ আর্কাইভ কিংবা আর্কাইভের অন্তর্গত তথ্যের ব্যপারে লেখালিখির সমাহার। বিএফএ কিন্তু জানে যে সিনেমা কখনই শুধু খয়েরি কোন ফিল্ম রোলে আবদ্ধ ছিল না, থাকতে পারেনা – তা মানুষের কাছে পৌঁছয় বিভিন্ন পত্রিকা ও বই এর মাধ্যমে (দেখুন ‘বইপত্র’)। সিনেমা জগতের ব্যাপারে কিছুটা অজানা, কিছুটা অচেনা তথ্য পাওয়া সম্ভব ‘গুপ্তধন’ ও ‘তারাদের বিজ্ঞাপন’ বিভাগগুলোতে। একই সঙ্গে ‘আমাদের ছবি’ বিভাগে বিএফএ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ শব্দের বাইরে সিনেমার আকারেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। এত শত বিভাগ মানেই যেন মনে হয় কেউ সব সময়ই দণ্ড হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে এই তথ্যগুলোকে— যেমন আর কী আর যে কোন আরকাইভে হয়ে থাকে। তবে বিএফএ বোঝে কিছু ইতিহাস কেবল মানুষের স্মৃতিতেই পাওয়া সম্ভব। তাই ‘আপনাদের কথা’ বিভাগে এই ওয়েবসাইট তার পাঠকদের সিনেমা নিয়ে তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত গল্প বলার জন্যও আমন্ত্রণ জানায়। আবার যে কোন আরকাইভ-ভবনে যতটা তীব্র ভাবে জিনিসপত্র ছোঁয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে, ততটাই প্রবল আবেদনের সঙ্গে বিএফএ তার ‘তখন আর এখন’ এবং ‘স্মৃতির ঠিকানা’ বিভাগের ছবিগুলোর ওপরে পাঠকদের কার্সার বুলিয়ে চিত্রগুলোকে সাদা-কালো থেকে রঙিন হতে দেখে নিতে বলে। অপর দিকে ‘খেলাঘর’ বিভাগটিতে রয়েছে ভিন্ন শব্দছক ও ধাঁধাঁ যা দিয়ে পাঠকরা তাঁদের ফিল্মি-জ্ঞানের ব্যাপ্তিটা আরও একবার ঝালিয়ে নিতে পারবেন। বলাই বাহুল্য এই ওয়েবসাইট হল সিনে-প্রেমীদের বর্মিবাক্স। এখনও পর্যন্ত এখানে শুধুই ‘অফিসিয়াল’ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে, যদিও আশা করা যায় পরবর্তী কালে এখানে আমরা বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অনেক গোপন ‘আনঅফিসিয়াল’ তথ্যও  একদিন সহজেই পাব।আজ আমরা এমন এক জগতে বাস করি যা ছবি ও ভিডিও-র দ্বারা পরিবেষ্টিত। এমন এক জগতে ভবিষ্যৎকে বুঝতে গেলে লাগবে তার অতীতের দৃষ্টি-নির্ভর সৃষ্টির খোঁজ। বিএফএ আজ হয়ে উঠেছে আমাদের এই খোঁজের দিশারি।
স্রগ্ধরামালিনী দাস
নিউ সন্তোষপুর, কলকাতা