স্টুডিও বিবরণ

প্রথম পাতা > স্টুডিও বিবরণ
দেবদত্ত স্টুডিও

দেবদত্ত স্টুডিও


ঠিকানা: বরানগর

কার্যকাল: ১৯৩৬-১৯৪০

প্রথম ছবি: রজনী (১৯৩৬)

দেবদত্ত স্টুডিওর মালিক দেবদত্ত শীল (১৯০৬-২০০৩) ছিলেন বিখ্যাত দানবীর মতিলাল শীলের বংশধর। শরিকি বিবাদে দেবদত্তের বাবা ভগবতীদাস শীলকে খুন হতে হয়েছিল। দেবদত্তরা তিন ভাই। বড় ভাই রাখালদাস তাঁর পদ্মপুকুরের বাড়িতে রেখে বাকি দুই ভাইকে মানুষ করেন। দেবদত্ত সবার ছোট। দেবদত্ত এবং তাঁর মেজ দাদা গোকুল শীল, দুজনেরই সিনেমা ব্যবসার দিকে ঝোঁক যায়। দেবদত্ত ফিল্মসের ব্যানারে প্রথম ছবি ছিল অহল্যা (১৯৩৬, ছোট)। সেটা কালী ফিল্মসে তোলা হয়। ইতিমধ্যে ৮৬ বি টি রোডের ঠিকানায় দেবদত্ত স্টুডিও তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। দমদম-বরানগর অঞ্চলে শীল পরিবারের বিশাল ভূসম্পত্তি ছিল। দেবদত্তের ভাগেও তার কিছুটা পড়েছিল। তারই একটা অংশে স্টুডিও হল। পরিচালক জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দিলেন সেখানে। তাঁরই পরিচালনায় দেবদত্ত ফিল্মসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি রজনী (১৯৩৬) গৃহীত হল নতুন স্টুডিওয়। সেখানে দেবদত্ত ফিল্মসের ছবি যেমন তোলা হতে থাকল, গোকুল শীলের জিসি টকিজের ব্যানারে ইন্দিরা-ও (১৯৩৭) তোলা হল। রুক্মিণী (১৯৩৯) তোলা হয়েছিল বাংলা-হিন্দি ডবল ভার্সনে। প্রবীণেরা মনে করতে পারেন, নিউ থিয়েটার্সের বিখ্যাত ছবি, কানন দেবী-পাহাড়ী সান্যাল অভিনীত সাপুড়ে (১৯৩৯) ছবির কিছু গানের দৃশ্য দেবদত্ত স্টুডিওতে শুট করা হয়। তবে ফুর্তিবাজ স্বভাবের দেবদত্ত টাকাপয়সার ব্যাপারে খুব হিসেবি ছিলেন না। তাই অনেক ধুমধাম করে স্টুডিও তৈরি করেও চালাতে পারেননি বেশি দিন। ১৯৪৩ সালে তাঁরা চিত্রাঙ্গদা নামে একটা ছবির কথা ঘোষণা করেছিলেন। তা আর শেষ হয়নি। এই স্টুডিওই পরে এস ডি নারাং লিজ নিয়ে তাঁর বেঙ্গল ন্যাশনাল স্টুডিও (দ্র বেঙ্গল ন্যাশনাল স্টুডিও) গড়ে তোলেন। বেঙ্গল ন্যাশনাল স্টুডিও বন্ধ হওয়ার পরে স্টুডিওর জমি কালক্রমে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসের অঙ্গীভূত হয়। আইএসআই ক্যাম্পাসের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মিউজিয়াম এখন যেখানে, যেখানে আছে বিখ্যাত ডায়নোসর বড়াপাসরাস টেগোরাইয়ের ফসিল, ওই এলাকাটাই আগে ছিল দেবদত্ত স্টুডিও। পিছনের একটা ইলেকট্রিক অফিসের কাঠামো দেখলে পুরনো স্টুডিও ভবনের আদল কিছুটা চিনে নেওয়া যায় আজও।

নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী
অহল্যা (১৯৩৬), জোড়া ঘুঘু (১৯৩৬), সুলোচনা (১৯৩৬, তেলুগু), গ্রহের ফের (১৯৩৭), ইন্দিরা (১৯৩৭), গোরা (১৯৩৮), রুক্মিণী (১৯৩৯, বাংলা-হিন্দি), পথ ভুলে (১৯৪০)

পুনশ্চ

দেবদত্ত স্টুডিওর অকালমৃত্যু হলেও দেবদত্ত ফিল্মস কিন্তু খাতায়কলমে বেঁচে আছে আজও। ১৯৬৪ সালের হিন্দি ছবি, কিশোরকুমার অভিনীত ‘ডাল মে কালা’ ছবিটা দেখেছেন? দেবদত্ত ফিল্মস এবং দেবদত্ত স্টুডিওর শেষ ছবি, প্রেমেন্দ্র মিত্রের উপন্যাস অবলম্বনে ‘পথ ভুলে’র গল্প ছিল ওটাই। দেবদত্ত ফিল্মস মামলা করে ‘ডাল মে কালা’ ছবির স্বত্ব আদায় করেছে।

আরও ছবি