স্টুডিও বিবরণ

প্রথম পাতা > স্টুডিও বিবরণ
ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস

ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস


ঠিকানা: দমদম রোড

কার্যকাল: ১৯২৯-১৯৩১

প্রথম ছবি: কামনার আগুন (১৯৩০)

ইন্ডিয়ান কিনেমা আর্টস-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরে ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে ডিজি যে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন সেটাই ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস। ৪০ (বর্তমানে ১৬) দমদম রোডের বাগানবাড়িতে স্টুডিওটি তৈরি হয়। বাড়িটা কিছুদিন আগে অবধিও ছিল। এখন সেখানে একটি বহুতল আবাসন হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ডিজি এ বার প্রথম থেকেই লিমিটেড কোম্পানি করবেন এবং শেয়ার বেচে টাকা তুলবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। ফলে শুরু থেকেই কোম্পানির ডিরেক্টর এবং স্টুডিওর কলাকুশলী একসঙ্গেই খুঁজতে শুরু করেছিলেন। কল্লোল পত্রিকা গোষ্ঠীর দীনেশরঞ্জন দাস যেমন সম্ভাব্য লেখক-পরিচালক হিসেবে এলেন, তাঁর বোন তরুবালা সেন হলেন সংস্থার একজন ডিরেক্টর। তিনি দু’হাজার টাকা দিলেন, মানে আদতে দিলেন তাঁর স্বামী নামী আইনজীবী এস কে সেন। গৌরীপুরের রাজকুমারকে তখন সবাই শৌখিন মানুষ বলে জানে। ডিজি তাঁর কাছ থেকে দু’হাজার টাকা নিলেন। তাঁকে কোম্পানির ডিরেক্টর তো করা হলই, অভিনয়ও করতে হবে বলে জানানো হল। বলা বাহুল্য রাজকুমারের নাম প্রমথেশ বড়ুয়া। টাকা দিয়ে ডিরেক্টর হলেন পুরীর রাজা শ্রীরামচন্দ্র দেব। বর্ধমানে শেয়ার বিক্রি করতে গিয়ে খোঁজ মিলল এক উৎসাহী যুবকের। লেখাজোখায় আগ্রহ দেখে তাঁকেও সম্ভাব্য লেখক হিসেবে নেওয়া হল। নাম তাঁর দেবকী কুমার বসু। কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে ক্যামেরার কাজে লখনৌ থেকে এসে যোগ দিলেন কৃষ্ণগোপাল। এই ভাবে তিল তিল করে স্টুডিওর পত্তন। ১৯২৯ সালের ২১ মে তার উদ্বোধন করলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। প্রথম ছবি পরিচালনা করলেন ডিজি নিজেই। কামনার আগুন বা ফ্লেম অফ ফ্লেশ নামে সে ছবিতে অভিনয় করলেন দীনেশরঞ্জন দাস, দেবকী কুমার বসু, দীনেন গুপ্তের বাবা হেম গুপ্ত, ডিজি-র স্ত্রী প্রেমলতিকা দেবী এবং সবিতা দেবী। পঞ্চশর ছবিতে পরিচালনায় হাতেখড়ি হল দেবকীর আর একটি পূর্ণাঙ্গ চরিত্রে এই প্রথম অভিনয়ে থাকলেন প্রমথেশ বড়ুয়া। এখানেই চরিত্রহীন ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন নবদ্বীপ হালদার। সেই সঙ্গে চিত্রগ্রাহক দিব্যেন্দু ঘোষের বাবা সতীশ ঘোষ, পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্ত, বাণী কুমার, কানাইলাল ঘোষাল এঁদের সকলেরই হাতেখড়ি এই প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সবাক ছবির যুগ জাঁকিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে দেখে ডিজি বুঝতেই পারলেন নির্বাক স্টুডিও নিয়ে আর বেশিদূর এগোনো যাবে না। ফলে ঝাঁপ ফেলল ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস। বড়ুয়া, ডিজি, দেবকী অচিরেই অবশ্য আবার এক হলেন। এ বার ঠিকানা বড়ুয়া স্টুডিও।

নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী
কামনার আগুন (১৯৩০), অলীকবাবু (১৯৩০), পঞ্চশর (১৯৩০), দ্য বর্ডার থিফ (১৯৩০), নটি বয় (১৯৩০), মরণের পরে (১৯৩১), টাকায় কি না হয় (১৯৩১), চরিত্রহীন (১৯৩১)।

পুনশ্চ

স্বল্প আয়ুষ্কালে ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিল্মস যে ভবিষ্যতের একাধিক নক্ষত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিল, সে তো দেখাই গেল। আর একটি আত্মপ্রকাশ ঘটতে ঘটতেও ঘটেনি। সেটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। কথা ছিল, রবীন্দ্রনাথের তপতী নাটক অবলম্বনে ছবি করবেন ডিজি। চিত্রনাট্য লিখে দিয়ে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবেন রবীন্দ্রনাথ। ঠাকুরবাড়ির সদস্য আর শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরা থাকবেন অন্যান্য চরিত্রে। ডঃ টেগোর অ্যাজ মুভি স্টার, রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাজ ফিল্ম স্টার ইত্যাদি শিরোনামে অমৃতবাজার পত্রিকা, ইলাস্ট্রেটেড উইকলি-তে ছবি-সহ খবরও বেরিয়ে গেল। কিন্তু সামনেই রবীন্দ্রনাথের বিদেশযাত্রা এসে পড়ায় এই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

আরও ছবি