ঠিকানা: ১২ মুলেন স্ট্রিট
কার্যকাল: ১৯৩০-১৯৩৭
প্রথম ছবি: অপরাধী (১৯৩১)
ফ্রান্স থেকে ছবি তোলার কাজ শিখে দেশে ফিরলেন প্রমথেশ বড়ুয়া । ওঁর ১৪ নম্বর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসভবন লাগোয়া ১২ মুলেন স্ট্রিটের বাড়িতে বড়ুয়া ফিল্ম ইউনিট তৈরি হল। তখনকার স্টুডিও মানে সানলাইট স্টুডিও। অর্থাৎ ছবি তোলা হয় সূর্যের আলোয়। কিন্তু সেই আলো যে সঠিকভাবে বিষয়বস্তুর ওপর ফেলা যায় না, সেটা বড়ুয়া তত দিনে জেনে গিয়েছেন। অতএব তিনি প্রথম থেকেই চিন্তা করলেন কৃত্রিম অর্থাৎ বৈদ্যুতিক আলো র কথা। সেইমতো রিফ্লেক্টর তৈরি করিয়ে বার বার বিভিন্ন শক্তির আলো ব্যবহার করে অবশেষে যা চাইছিলেন পাওয়া গেল। বাংলা ছবিতে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার প্রথম এই স্টুডিওতেই হল। মেকআপের ব্যাপারেও খুব খুঁতখুঁতে ছিলেন বড়ুয়া। সাজসজ্জার সরঞ্জাম-ও তিনি আমদানি করার বন্দোবস্ত করলেন। প্রথম ছবি অপরাধী। ২৮ নভেম্বর ১৯৩১ তারিখে মুক্তি পেল চিত্রায়। থ্রিলার-ধর্মী ছবিটি পরিচালনা করেন দেবকী বসু। পরের ছবি নিশির ডাক-এর (১৯৩২) পরিচালকও তিনি। অভিনেতা হিসেবে এতে আত্মপ্রকাশ করলেন সুশীল মজুমদার। তৃতীয় ছবি একদা (১৯৩২) থেকেই তিনি পরিচালক হলেন। এই ছবিতে আবার অভিনয়ে দেখা গেল পরবর্তী কালের নামী পরিচালক নীরেন লাহিড়িকে।
ইতিমধ্যে নির্বাক যুগ শেষ হতে চলেছে। বড়ুয়া মন দিলেন সাউন্ড স্টুডিওর কাজে। বম্বে থেকে সাউন্ড ফিল্মের যন্ত্রপাতি এল। বড়ুয়া ফিল্ম ইউনিট থেকে বেরোল সবাক চিত্র বেঙ্গল ১৯৮৩ (১৯৩২)। পরিচালনায় প্রমথেশ বড়ুয়া। কিন্তু চলল না ছবিটা। এ দিকে স্টুডিও করতে গিয়ে জলের মতো খরচ করে বসে আছেন প্রমথেশ। তাঁর অন্যতম সহযোগী এখন ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। বড়ুয়া ফিল্ম ইউনিট-এর কিছু শেয়ার বারাণসী এবং গয়া-র রাজার কাছে বিক্রি করে প্রমথেশকে সাহায্য করতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম ছবি মার খেয়ে শেষরক্ষা হল না। দেবকী বসু বড়ুয়ার ইউনিট থেকে চন্ডীদাস তুলবেন কথা হয়েছিল। চিত্রনাট্য লেখা হয়ে গিয়েছে। দেবকীবাবু চিত্রনাট্য নিয়ে চলে গেলেন নিউ থিয়েটার্সে। বড়ুয়া সাহেবও শেষ পর্যন্ত নিউ থিয়েটার্স-এ যোগ দিলেন। এ দিকে অরোরার মালিক অনাদি বসুর থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। ফেরত দিতে না পারায় স্টুডিও চলে গেল অনাদির হাতেই। বড়ুয়া স্টুডিওর সাজসরঞ্জামই পরে অরোরা স্টুডিওর কাজে লেগে যায়। বড়ুয়া স্টুডিওর এখানেই ইতি।
পুনশ্চ
বড়ুয়া স্টুডিওতে আর একটি ছবির পরিকল্পনা হয়েছিল ‘অনাথ’ নামে। রাঁচিতে আউটডোর শুটিংও হয়। কিন্তু টাকার অভাবে কাজ শেষ করা যায়নি। ঠিক ছিল এটি বাংলা, হিন্দী এবং ইংরেজিতে হবে। ছবিটা হলে এটিই হত ভারতের প্রথম ত্রিভাষিক ছবি। অনাথ-এর গল্প থেকেই নিউ থিয়েটার্সে প্রমথেশের প্রথম ছবি রূপলেখা(১৯৩৪)।