ঠিকানা: নাগেরবাজার
কার্যকাল: ১৯২২-১৯২৪
প্রথম ছবি: আঁধারে আলো (১৯২২)
ম্যাডান থিয়েটারে দাপটে অভিনয় করতে করতেই শিশির ভাদুড়ীর সঙ্গে ম্যাডান কর্তৃপক্ষের মতান্তর হয়। শিশির ম্যাডান ছেড়ে নতুন সিনেমা কোম্পানি খোলার ব্যাপারে মন স্থির করে ফেলেন। আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসেন জাস্টিস চন্দ্রমাধব ঘোষের ছেলে ব্যারিস্টার বি কে ঘোষ, যিনি কাকু ঘোষ নামেও পরিচিত ছিলেন। দমদম রোড আর নাগেরবাজারের সংযোগস্থলে এঁর বাগানবাড়িতেই স্টুডিওর প্রতিষ্ঠা হল। আঁধারে আলো কাহিনী নির্বাচন করে শরৎকাহিনী চিত্রায়ণের সূত্রপাত করলেন শিশির ভাদুড়ী। তাঁর সহযোগী হিসেবে যোগ দিলেন বন্ধু নটশেখর নরেশ মিত্র। ম্যাডান থেকে এলেন ক্যামেরাম্যান এবং রসায়নাগারিক ননী সান্যাল। আর এলেন ম্যাডানের টাইটল লেখক দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। সাজসরঞ্জাম পাওয়া গেল বন্ধ হয়ে যাওয়া ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি থেকে। ছবি পরিচালনার দায়িত্ব শিশিরেরই ছিল। কিন্তু ছবির মাঝপথে বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় তাঁকে বেশ কিছুদিন শয্যাশায়ী থাকতে হয়। সেই সঙ্গে কাকু ঘোষের সঙ্গে মনান্তর হওয়ায় তিনি ছবির কাজ ছেড়ে দেন। কাকুর অনুরোধে ছবিটি শেষ করেন নরেশ মিত্র। শরৎচন্দ্র নিজে স্টুডিওতে এসে নরেশকে চিত্রনাট্যে সাহায্য করেন, নরেশের জন্য অঘোরকালী নামে একটি চরিত্রও তৈরি করে দেন। এর পরে নরেশ মানভঞ্জন পরিচালনা করে পর্দায় রবীন্দ্রকাহিনীর সূত্রপাত ঘটান। রসা থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথ সে ছবি দেখেছিলেন। ১২টি রবীন্দ্রকাহিনীর স্বত্ব কিনেছিল তাজমহল। কিন্তু সেগুলোর সদ্ব্যবহার আর হয়নি। ১৯২৪-এর পরে স্টুডিও বন্ধ হয়ে যায়। নাগেরবাজারের যে অংশে স্টুডিও ছিল বলে জানা যায়, সেখানে এখন আর বাগানবাড়ির অস্তিত্ব নেই। তবে একটা পুরনো মজা পুকুর আর একটা পুরনো পিলার বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও চোখে পড়ে। আন্দাজ করা যায়, সেগুলোই তাজমহলের শেষ চিহ্ন।
পুনশ্চ
তাজমহলে এসেও দুর্গাদাস টাইটল লেখার কাজেই নিযুক্ত হন প্রথমে। আঁধারে আলো এবং মানভঞ্জনে এক্সট্রার ভূমিকায় অভিনয় করেন। নায়ক হিসেবে তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ চন্দ্রনাথে। অর্থাৎ বাংলা ছবির প্রথম মহানায়ক তাজমহল স্টুডিওরই দান। যোগেশ চৌধুরী, ইন্দু মুখোপাধ্যায়, তিনকড়ি চক্রবর্তী, শিশুবালা, মিস লাইটেরও সিনেমায় প্রথম অভিনয় তাজমহলের ছবিতেই।