স্টুডিও বিবরণ

প্রথম পাতা > স্টুডিও বিবরণ
অরোরা স্টুডিও

অরোরা স্টুডিও


ঠিকানা: নারকেলডাঙা, সল্টলেক

কার্যকাল: ১৯৩৬-১৯৯৯, ২০০৩-

প্রথম ছবি: আম্মা (১৯৩৯, তেলুগু)

কবেকার সেই ভ্রাম্যমাণ ছবি দেখানোর যুগ থেকে চিত্রজগতে জড়িয়ে রয়েছে অরোরা। প্রদর্শক, পরিবেশক, প্রযোজক সব রকম ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে তাদের।  দেবী ঘোষ আর অনাদি বসুর হাতে তৈরি সেই অরোরা নিজস্ব স্টুডিও নির্মাণে মন দেয় আরও বেশ কিছু দিন পরে।  ১৯২১ সাল থেকেই যদিও ছবি তৈরি শুরু করেছে তারা। নির্বাক যুগে মোট সাতটি পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি হয়েছে অরোরার প্রযোজনায়।  কিন্তু  তখন তাদের কোন স্টুডিও ছিল না। ছিল একটা ল্যাবরেটরি। প্রথমে রাজবল্লভ স্ট্রিট, পরে বাগবাজারের কাঁটাপুকুরে। ১৯২৯ সালে অরোরা সিনেমা থেকে আলাদা করে তৈরি হল অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশন। ধর্মতলা স্ট্রিটের সেই অফিসকে কেন্দ্র করেই শুরু হল ছবি পরিবেশনার কাজে অরোরার বৃহৎ কর্মকাণ্ড।  পরের দশক থেকে নিউ থিয়েটার্সের যাবতীয় ছবি অরোরাই পরিবেশন করে এসেছে। কিন্তু সবাক যুগে ছবি প্রযোজনার কাজেও ব্রাত্য থাকতে চায়নি তারা। সেই কারণেই নিজস্ব স্টুডিওর পরিকল্পনা। 
নারকেলডাঙা নর্থ রোড ধরে দক্ষিণ দিকে সোজা এগিয়ে গেলে এখন যেখানে বিশাল অত্যাধুনিক আবাসন, সেটাই ছিল অরোরা স্টুডিওর ঠিকানা। প্রমথেশ বড়ুয়া যখন বালিগঞ্জে তাঁর স্টুডিও তৈরি করেন, সেই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল অরোরা। বড়ুয়া স্টুডিও বন্ধ হওয়ার পরে সেখানকার যন্ত্রপাতি অনেকটাই অরোরার হাতে এল। তার আগেই অবশ্য নারকেলডাঙায় বিনোদবিহারী সাহার বাগানবাড়িতে ১৯৩১ সালে আস্তানা গেড়েছেন এঁরা। ধীরে ধীরে সেখানেই গড়ে উঠল পাকা ফ্লোর, তৈরি হল বাগান-পুকুরওয়ালা পরিপাটি স্টুডিও বাড়িটি। ১৯৩৬ সালে দরজা খুলল তার। এখানে তৈরি প্রথম কাহিনিচিত্র নিরঞ্জন পালের পরিচালনায় ‘আম্মা’(পরে ফিল্ম প্রোডিউসার্সের ব্যান্রে এরই বাংলা হয়‘শুকতারা’)। তার পর তামিল ভাষায় ‘শংকরাচার্য’।  অরোরার  নিজস্ব প্রযোজনার কাহিনিচিত্র, তথ্যচিত্র তো ছিলই। স্টুডিও ভাড়া দেওয়া হত অন্যদেরও। দেবী ঘোষ, ননীগোপাল সান্যালের মতো প্রথম যুগের আলোকচিত্রীরা এই স্টুডিওর সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। পরে ক্যামেরায় বঙ্কু রায়, সরোজ (নফতা) মিত্র, শব্দযন্ত্রে সত্যেন দাশগুপ্ত,পরেশ দাশগুপ্তরা অরোরায় লম্বা সময় জুড়ে কাজ করেছেন।  সুচিত্রা সেনের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সাত নম্বর কয়েদি (১৯৫৩) অরোরা স্টুডিওতেই তোলা হয়। ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪) ছবির সেই বিখ্যাত বাড়ির সেটও অরোরাতেই।
অরোরার নারকেলডাঙা স্টুডিও বন্ধ হলেও সল্টলেকে অরোরার নতুন স্টুডিও খুলেছেন অনাদি বসুর পৌত্র, অজিত বসুর পুত্র অঞ্জন বসু। ঋতুপর্ণ ঘোষের সব চরিত্র কাল্পনিক (২০০৯) শুটিং হয় এখানেই। সম্প্রতি নতুন করে কাহিনিচিত্র প্রযোজনাতেও ফিরেছে অরোরা। তাদের প্রযোজিত ‘কালকক্ষ’ মুক্তি পেয়েছে এ বছরেই।  অঞ্জন নিজে একাধিক পুরস্কারজয়ী তথ্যচিত্রের পরিচালক। অরোরার ইতিহাস নিয়ে অরোরা বায়োস্কোপ নামেও একটি তথ্যচিত্র রয়েছে তাঁর। 

নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী
নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী 

এই ছবিগুলি অরোরার প্রযোজনায় অরোরা স্টুডিওতে নির্মিত।  

অভিনব (১৯৪০), পতিব্রতা (১৯৪২), সন্ধ্যা (১৯৪৪), পথের সাথী (১৯৪৬), বন্ধুর পথ (১৯৪৯), প্রহ্লাদ (১৯৫২), মুশকিল আসান (১৯৫৩), জয়দেব (১৯৫৪), ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), সদানন্দের মেলা (১৯৫৪), হরিশচন্দ্র (১৯৫৭), জলসাঘর (১৯৫৮), চুপি চুপি আসে (১৯৬০), ভগিনী নিবেদিতা (১৯৬২), রাধাকৃষ্ণ (১৯৬৪), রাজা রামমোহন (১৯৬৫), আরোগ্য নিকেতন (১৯৬৯), দুরন্ত জয় (১৯৭৩)

এই ছবিগুলি অরোরা স্টুডিওয় গৃহীত। 

অভয়ের বিয়ে (১৯৪২), ছদ্মবেশী (১৯৪৪), কত দূর (১৯৪৫), সাত নম্বর কয়েদি (১৯৫৩), ডাকিনীর চর (১৯৫৫), মেজ বউ (১৯৫৬), মহানিশা (১৯৫৬), স্বপ্ন নিয়ে (১৯৬৬), একদিন প্রতিদিন (১৯৮০), আকালের সন্ধানে (১৯৮১), ময়না তদন্ত (১৯৮১), খারিজ (১৯৮২)

পুনশ্চ

তরুণী বিজয়া দাস যখন সন্ধ্যা (১৯৪৪) ছবিতে অভিনয় করতে অরোরা স্টুডিওতে পা দিচ্ছেন, তখন সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়নি। সত্যজিৎ ছবির জগতে পা-ও রাখেননি। এর ঠিক এগারো বছর পরে পথের পাঁচালীর পরিবেশনার দায়িত্ব পেল অরোরা। আর সত্যজিৎ নিজে অরোরা স্টুডিওতে কাজ করলেন জলসাঘর (১৯৫৮) ছবির সুবাদে। 

আরও ছবি