ঠিকানা: টালিগঞ্জ
কার্যকাল: ১৯৩২-১৯৭৪
প্রথম ছবি: শ্রীগৌরাঙ্গ (১৯৩৩)
রাধা স্টুডিওর গোড়াপত্তন তিরিশের দশকের গোড়ায়। রাধা স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাওড়ার নামকরা ব্যবসায়ী শেঠ রাধাকিষণ চামারিয়া। চামারিয়া প্রথমে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু নির্বাক চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন। হরিপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় চামারিয়ার ‘শ্রীকান্ত’ ছবি দিয়েই চিত্রা সিনেমা হলের যাত্রা শুরু। তার পরে চামারিয়া টালিগঞ্জে তৎকালীন রসা রোডের (এখনকার দেশপ্রাণ শাসমল রোড) উপরে জমি কিনে গড়ে তোলেন স্টুডিও। ১৯৩২ সালের শেষ দিক থেকে এখানে নিয়মিত ছবি তোলা শুরু হয়। নবনির্মিত স্টুডিওয় রাধা ফিল্মস এর ব্যানারে প্রথম সবাক ছবি শ্রীগৌরাঙ্গ। পরিচালনায় প্রফুল্ল ঘোষ, ক্যামেরায় ডি জি গুনে এবং শব্দগ্রহণে নৃপেন পাল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেই নৃপেন সরাসরি রাধা স্টুডিওয় যোগ দেন। বাংলা, হিন্দি (চার দরবেশ, হরিভক্তি, ওয়ামক এজরা) উর্দু (থান্ডারবোল্ট) কাহিনিচিত্র এবং স্বল্পদৈর্ঘের ছবি (ঝিনঝিনিয়ার জের, কেমন জব্দ, অবাক কাণ্ড, মিটমাট) সব রকম ছবিতেই সাফল্য পেল রাধা। পৌরাণিক ছবিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী তো হলই, তার সঙ্গে মানময়ী গার্লস স্কুল, বেকার নাশনের মতো জনপ্রিয় ছবির দৌলতে মুখে মুখে ফিরতে লাগল রাধা ফিল্মের নাম। এই দুরন্ত গতিতে ছেদ পড়ল বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। ১৯৪০ সালে জাপান যুদ্ধ ঘোষণা করার পরে কিছুদিন বন্ধ রইল কাজ। তার পর কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড হল। কবি অজয় ভট্টাচার্যের ছবি ‘অশোক’ নির্মিত হওয়ার পরেই আবার ছেদ। রাধা স্টুডিও নিয়ে নেওয়া হল সরকারি গুদামের কাজে লাগানো হবে বলে। যুদ্ধ শেষ হতেই স্টুডিও কিনে নিলেন দুই বাঙালি কানাইলাল ঘোষাল এবং মাধবলাল ঘোষাল। চিত্ররূপা প্রোডাকশনের ব্যানারে বন্দী, সন্ধির মতো হিট ছবি তার আগেই বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। কিনেছেন মুভি টেকনিক সোসাইটি। হিন্দি ছবি পরিবেশনার কাজও শুরু করেছেন। এ বার হাতে এল রাধা স্টুডিও। তারিখ, ১৯৪৫ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর। সাউণ্ড ট্রাক ক্যামেরা, লাইট ও ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি আনিয়ে দ্রুত স্টুডিওটি চালু করে ফেলা হল। বাইরের অনেক ছবিও তোলা হতে থাকল। ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত টানা কাজ হয়েছে এখানে। তার পর এই স্টুডিওটি সরকার ভাড়া নিয়ে এখানে দূরদর্শনের স্টুডিও তৈরি করে। পরে দূরদর্শন কেন্দ্র সরে যায় গলফ গ্রিনে। সরকারই স্টুডিও অধিগ্রহণ করে ওখানে চলচ্চিত্র সংগ্রহালয় তৈরি করে। চলচ্চিত্র শতবার্ষিকী ভবন নামে পরিচিত হয় রাধা স্টুডিও। সম্প্রতি রাধা স্টুডিও ফিরে পেয়েছে তার পুরনো নাম। চলচ্চিত্র সংগ্রহালয়ের সঙ্গেই সেটা এখন সরকারি সিনেমা হলও বটে। কিন্তু পুরনো সেই স্টুডিও ভবন? তার আর অস্তিত্ব নেই।
পুনশ্চ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েটি প্রায়ই দেখত বন্ধ দরজার ও পাশে গাছপালা ঘেরা একটা গা ছমছমে জায়গা। হঠাৎ একদিন দরজা গেল খুলে। জোরকদমে চলতে লাগল সাফাইয়ের কাজ। কলকাতায় নাকি টেলিভিশন আসবে, ওখানে হবে স্টুডিও! রহস্যে ঘেরা রাধা স্টুডিও বদলে যাবে দূরদর্শন কেন্দ্রে! মেয়েটির জীবনও বদলে গেল ক’দিনের মধ্যেই। ওই রাধা স্টুডিওই বদলে দিল জীবন। বাংলার দর্শক পেলেন ছোট পর্দার প্রিয় মুখ চৈতালি সেনকে (পরে দাশগুপ্ত)।