স্টুডিও বিবরণ

প্রথম পাতা > স্টুডিও বিবরণ
ফটো প্লে সিন্ডিকেট

ফটো প্লে সিন্ডিকেট


ঠিকানা: বেহালা

কার্যকাল: ১৯২১-১৯২৪

প্রথম ছবি: সোল অফ আ স্লেভ বা বাঁদীর প্রাণ (১৯২২)

অহীন্দ্র চৌধুরী এবং প্রফুল্ল ঘোষের তৈরি ফিল্ম কোম্পানি। বেহালা ট্রাম ডিপো ছাড়িয়ে আরও দু’মাইল দূরে এই স্টুডিও আক্ষরিক অর্থেই হাতে কলমে গড়ে তোলা। যুবক অহীন্দ্র প্রথমে রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন নাটকের চিত্ররূপ দেওয়ার কথা ভাবেন। তার পর স্বত্ব পেতে দেরি হবে বুঝে বন্ধুদের পরামর্শে নিজের লেখা গল্প থেকে চিত্রনাট্য রচনার কাজে হাত দেন। ১০ নম্বর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রিটে খোলা হল সংস্থার অফিস। সেখানে বসেই পৌরাণিক কাহিনির উপযুক্ত চিত্রায়ণের জন্য নিজেরা একটি স্টুডিও তৈরির পরিকল্পনা করেন ওঁরা। অহীন্দ্রর প্রধান দোসর ছিলেন তাঁর বন্ধু প্রফুল্ল, যিনি পরে নামী চিত্রপরিচালক হন। স্টুডিওর অবস্থান সম্পর্কে অহীন্দ্র লিখছেন, ‘বেহালার ট্রাম-টারমিনাস যেখানে, তার থেকে পূর্ব দিকে মাইলখানেক হাঁটতে হয়, কালীঘাট-ফলতা রেলওয়ে ছিল তখন, সেই লাইন পেরিয়ে গ্রামের ভিতরে দু প্লটের জমি একসঙ্গে নেওয়া হল।’ জমির সামনে বিঘা দেড়েক অংশ ছিল একটা সমতল চাতালের মতো। আশপাশের ঝোপজঙ্গল কেটে ফেলা হল। বড় বাঁশঝাড়ের অনেকটাও কাটা হল। সেখান থেকে চাতালে যাওয়ার পথে ছিল জলনিকাশি খানা। তার উপরে বসল বাহারে সাঁকো। চাতালের মাঝখানে হল স্টোর রুম, দুপাশে দুটো সাজঘর। তার সামনে টানা বারান্দা, জাফরি করা কাঠের রেলিং, তাতে লতানে গাছ। সামনে বাগান। বাগানের দু’ধারে গোলঘর। শালের খুঁটি, খড়ের চাল। দক্ষিণ দিকে বড় চালার ছাউনি, সেটা ওয়র্কশপ। বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান চার্লস ক্রীড, শিল্পবেত্তা ও সি গাঙ্গুলীর ভাই অলিন্দ্র, কল্লোল গোষ্ঠীর গোকুল নাগ— এঁরা সকলে জড়িত ছিলেন এই স্টুডিও নির্মাণ তথা সোল অফ আ স্লেভ ছবির সঙ্গে। ছবিটি প্রশংসা পেলেও অহীন্দ্র-প্রফুল্ল একসঙ্গে আর ছবি করে উঠতে পারেননি। টাকাপয়সার জোগানে টান এবং সেই সঙ্গে নাট্যমঞ্চে অহীন্দ্রের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া সব মিলিয়েই ফটো প্লে সিন্ডিকেট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তার পর প্রফুল্ল অন্য চাকরি নিয়ে কলকাতা ছাড়লে কোম্পানি এবং স্টুডিও দুইই বন্ধ হয়ে যায়।

পুনশ্চ

১৯২১-এর ডিসেম্বরে প্রিন্স অব ওয়েলসকে কলকাতায় অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিশাল সব তোরণ, থাম ইত্যাদি বসানো হয়েছিল ময়দান চত্বরে। সব মিটে যাওয়ার পরে সেগুলো খুলে নীলামে চড়ানো হয়েছিল। তার একটা বড় অংশ অহীন্দ্ররা কিনে নেন স্টুডিও সাজানোর জন্য। দেড়শো টাকায় এত মালপত্র হয়েছিল যে, বয়ে নিয়ে যেতে দশ-বারোটা মোষের গাড়ি লেগেছিল।

আরও ছবি