ঠিকানা: প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড
কার্যকাল: ১৯৩২- ২০০২
প্রথম ছবি: রাজরানী মীরা? (১৯৩৩, হিন্দি)
নিউ থিয়েটার্সে কাজের চাপ বাড়তে থাকায় বি এন সরকার আরও একটি ইউনিট তৈরির ব্যাপারে মনস্থির করেন। অতঃপর প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের পাশে একটা জমি নিয়ে (১৯৩২) সালে গড়ে ওঠে নিউ থিয়েটার্সের ২ নম্বর স্টুডিও, সংক্ষেপে এনটি ২। নিউ থিয়েটার্সের অনেক কাজই দু’টো স্টুডিওয় ভাগাভাগি করে হতে থাকে। ফলে কোন ছবি কোথায় উঠেছে, তার নির্দিষ্ট তালিকা পাওয়া মুশকিল। কিছু কিছু ছবির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। যেমন, নিউ থিয়েটার্সে পৃথ্বীরাজের কাপুরের প্রথম ছবি রাজরানী মীরা (১৯৩৩) তোলা হয় ২ নম্বর স্টুডিওতেই। খুব সম্ভবত ওটাই এন টি ২-এর তোলা প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি। ‘মুক্তি’র সঙ্গে দেখানোর জন্য স্বল্প দৈর্ঘ্যের বাংলা ছবি ‘অর্ঘ্য’-ও (১৯৩৭) তোলা হয় এখানে। ১৯৪৩ সালের ছবি ‘প্রিয় বান্ধবী’-ও তাই। এর আগেই অবশ্য সর্বজন পরিচিত ছোটাইবাবু তথা যতীন্দ্রনাথ মিত্রের তত্ত্বাবধানে ১৯৩৯ সাল থেকে নিউ থিয়েটার্সের মালিকানাতেই এনটি ২-কে কেন্দ্র করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রোডাকশন্স আত্মপ্রকাশ করে। এই ব্যানারে তোলা হয় আলোছায়া (১৯৪০, হিন্দিতে আঁধি)। স্টুডিও ফ্লোর অন্যান্য প্রযোজক সংস্থাকেও ভাড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়। পঞ্চাশের দশকে নিউ থিয়েটার্স যখন সামগ্রিক ভাবেই আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হল, একটি সমবায় গঠনের প্রস্তাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। ঠিক হয়, সরকার কিছু টাকা দেবে এবং সমবায়ের শেয়ারহোল্ডারেরা কিছু টাকা দেবেন। পরে ছবি করে প্রাপ্ত অর্থ থেকে সরকারকে টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হল এই ব্যবস্থা এবং এই সমবায়ের কর্মকেন্দ্র হয়ে উঠল দু’নম্বর স্টুডিও। যে কারণে সে সময়কার বহু ছবির টাইটল কার্ডে এনটি ২ নম্বর স্টুডিওর নাম ‘স্টুডিও সাপ্লাই কোঅপারেটিভ’ হিসেবে উল্লিখিত হতে দেখা যায়। এই ভাবে প্রায় বেশ কিছু বছর চলেছিল। তার পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক্তিয়ারে চলে যায় ওই কোঅপারেটিভ। বি এন সরকার ওই জমি ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। ঋণ শোধ করতে না পারায় ব্যাঙ্ক সেই জমিও পরে সরকারের কাছে বিক্রি করে দেয়। স্টুডিওটা সরকারই চালাতে থাকে। বামফ্রন্ট আমলে এটার নাম হয়ে যায় টেকনিশিয়ান্স ২। অর্থাৎ টেকনিশিয়ান্স ১ তত দিনে সরকার অধিগ্রহণ করেছে। এনটি ২ হল দু’নম্বর সরকারি স্টুডিও, অতএব টেকনিশিয়ান্স ২। এখন লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের পাশে ওই স্টুডিওর জমিতেই রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমির অফিস হয়েছে।
পুনশ্চ
তপন সিংহ সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন এই স্টুডিওতে। সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবির বিখ্যাত ট্রেনের কামরার সেটও বংশী চন্দ্রগুপ্ত তৈরি করেছিলেন এন টি ২-তেই। লিলুয়ার রেল ওয়র্কশপ থেকে জিনিসপত্র এনে বানানো হয়েছিল। প্রায় এক মাসের বেশি লেগেছিল সেটটা শেষ হতে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল নীচে টায়ার বা স্প্রিং লাগিয়ে ওটা নাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সেটটা খুব ভারী হয়ে যাওয়ায় তা আর হয়নি।