স্টুডিও বিবরণ

প্রথম পাতা > স্টুডিও বিবরণ
ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিও

ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিও


ঠিকানা: সিঁথি

কার্যকাল: ১৯৩৯- ১৯৬১?

প্রথম ছবি: স্বামী স্ত্রী (১৯৪০)

১৯৩৯ সালের ৩১ জুলাই। সিঁথি মোড়ের পাশে উদ্বোধন হল এক নতুন স্টুডিওর। নাম ফিল্ম প্রোডিউসার্স। পরিচালকবর্গের মধ্যে ছিলেন মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়, উমানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, মাখনলাল মল্লিক, রামগতি হাজরা প্রমুখ। মুরলীধর আগে থেকেই রীতেন এন্ড কোং নামে পরিবেশনা সংস্থা এবং কমলা টকিজ নাম দিয়ে একটি প্রযোজনা সংস্থা চালাচ্ছিলেন। নতুন স্টুডিওটি ভাড়া নিল কমলা টকিজই। কমলা টকিজের প্রথম ছবি রাজগী (১৯৩৭) তোলা হয়েছিল কালী ফিল্মসে। এ বার তাঁরা নিজেদের স্টুডিওয় ছবি তুলতে প্রয়াসী হলেন। সতু সেন পরিচালিত স্বামী স্ত্রী (১৯৪০) এখানে তোলা প্রথম ছবি। দ্বিতীয় ছবি রাজকুমারের নির্বাসন (১৯৪০)। কমলা টকিজ অবশ্য স্বল্পস্থায়ী হল। মুরলীধর এমপি প্রোডাকশন শুরু করলেন শীঘ্রই। তখন তিনি আর এই স্টুডিওতে নেই। ফিল্ম প্রোডিউসার্সে উঠতে লাগল অন্যান্য ব্যানারের ছবি শুকতারা (১৯৪০), এ পার ও পার (১৯৪১) পাষাণ দেবতা (১৯৪২)...। কিছুদিন পরে স্টুডিও হাতবদল হল, বদল হল নামও। চল্লিশের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিও নামে পরিচিতি পেল ফিল্ম প্রোডিউসার্স। নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর হলেন মঙ্গল চক্রবর্তী ও পান্নালাল পাঠক। বিশ বছর আগে (১৯৪৮), পদ্মা প্রমত্তা নদী (১৯৪৮) ইত্যাদি ছবিগুলো এই পর্যায়ে তৈরি হয়েছে। এই ব্যবস্থাও চলল অল্প দিনই। স্টুডিও আবার ফেরত এল মুরলীধরের হাতেই। এমপি প্রোডাকশনই ন্যাশনাল সাউন্ডের দায়িত্ব নিল। সিঁথির মোড়ের এমপি স্টুডিও বলেই মানুষের মুখে মুখে ফিরতে লাগল এর কথা। ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিওর সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়টা এমপি-র সঙ্গেই। পরিচালক বিভূতি লাহা, চিত্রগ্রাহক বিজয় ঘোষ শব্দযন্ত্রী যতীন দত্ত, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, অনিল তালুকদার; সম্পাদক কালী রাহা, শিল্প নির্দেশক সত্যেন রায় চৌধুরী, সুধীর খান এবং ম্যানেজার হিসেবে বিমল ঘোষ যোগ দিলেন। এই পর্বের প্রথম ছবি সুকুমার দাশগুপ্তের পরিচালনায় 'আভিজাত্য' (১৯৪৯), এর পর অগ্রদূতের 'সংকল্প' (১৯৪৯)। অর্থাৎ এমপি-র যাবতীয় ছবি এ বার থেকে ন্যাশনাল সাউন্ডেই তোলা হতে থাকল। ১৯৫০-এর বিদ্যাসাগর এবং ১৯৫২-র বাবলা, দু’টি ছবির হিন্দি ভার্সনও হল। অন্য ব্যানারের ছবিও হয়েছে এখানে। অগ্রদূত এবং অগ্রগামীর প্রথম পর্বের বেশির ভাগ ছবিই এই স্টুডিওর। এবং সর্বোপরি উত্তমকুমারকে প্রথম হিট উপহার দিয়েছে এই স্টুডিও। বাংলার দর্শককে উপহার দিয়েছে উত্তম-সুচিত্রা জুটি। হ্যাঁ, বসু পরিবার এবং সাড়ে চুয়াত্তর, দু’টোই এই স্টুডিওয় তৈরি। দুঃখের কথা এই যে, উত্তম-সুচিত্রার জয়যাত্রার মধ্যেই স্টুডিওর ভাগ্য কিন্তু পড়ে যায়। ষাটের দশকের গোড়াতেই এমপি যুগ শেষ। ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিও নামে একটা সংস্থার অস্তিত্ব খাতায়কলমে বেঁচে আছে যদিও। সিঁথিতে ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিওর কিছু চিহ্নও রয়ে গেছে। একটা মজা পুকুর, স্টুডিও ফ্লোরের একটা বাড়ি আর একটা অন্য বাড়ি। এক সময় এমপি-র প্রধান অফিস ছিল সেটি। বসু পরিবার ছবির কিছু দৃশ্যও ওখানেই তোলা। স্টুডিও চত্বরে এখন একটি বাসভবন আছে। আর আছে কিছু কারখানা, গুদাম। ব্যস্ত সিঁথির মোড়ে দাঁড়ালে কি এখন ভাবতে পারা যাবে কয়েক হাত দূরের জমিতেই এক দিন অগ্নিপরীক্ষা, সাগরিকা, সূর্যতোরণ-এর মতো ছবির জন্ম হয়েছিল?

নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী
নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী 

এগুলি ফিল্ম প্রোডিউসার্স স্টুডিওতে গৃহীত। 

স্বামী স্ত্রী (১৯৪০), রাজকুমারের নির্বাসন (১৯৪০) শুকতারা (১৯৪০), এ পার ও পার (১৯৪১) পাষাণ দেবতা (১৯৪২) 

এগুলি এম পি ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিওতে গৃহীত। 

বিশ বছর আগে (১৯৪৮), চলার পথে (১৯৪৮), মায়ের ডাক (১৯৪৮), পদ্মা প্রমত্তা নদী (১৯৪৮) 

এগুলি এম পি স্টুডিওতে গৃহীত। 

আভিজাত্য (১৯৪৯), সংকল্প (১৯৪৯), সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৯), বিদ্যাসাগর (১০৫০), বাবলা (১৯৫০), সহযাত্রী (১৯৫১), বসু পরিবার (১৯৫২), কার পাপে (১৯৫২), সঞ্জীবনী (১৯৫২), সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), দেবী মালিনী (১৯৫৫), সবার উপরে (১৯৫৫), একটি রাত (১৯৫৬), সাগরিকা (১৯৫৬), ত্রিযামা (১৯৫৬), পথে হল দেরি (১৯৫৭), ডাক হরকরা (১৯৫৮), সূর্যতোরণ (১৯৫৮), হেডমাস্টার (১৯৫৯), কিছুক্ষণ (১৯৫৯), লালু ভুলু (১৯৫৯), খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন (১৯৬০), কুহক (১৯৬০), আজ কাল পরশু (১৯৬১)

পুনশ্চ

প্রথম বছর মাসে ৪০০, পরের বছর মাসে ৬০০ আর তৃতীয় বছর মাসে ৭০০ করে দেওয়া হবে। চলবে তো একে দিয়ে? প্রশ্নটা সন্তোষ সিংহকে করেছেন বিমল ঘোষ। সন্তোষ জবাব দিলেন, ঘষলে মাজলে চলে যাবে। নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় শেখানোর ভার সন্তোষের। বিমল স্টুডিও ম্যানেজার। কথা হচ্ছে একটি নতুন ছেলেকে নিয়ে। তিন-চারটে ফ্লপ ছবি করা হয়ে গেছে। তার পরেও ডাক এসেছে এম পি থেকে। সন্তোষের আশ্বাসবাণী পেয়ে তিন বছরের চুক্তি সই হল। ওই একটি বাক্য, ‘ঘষলে মাজলে চলে যাবে’, নির্ধারণ করে দিল ভবিষ্যত মহানায়কের কক্ষপথ।

আরও ছবি