ঠিকানা: বনহুগলী
কার্যকাল: ১৯২০-১৯২২
প্রথম ছবি: বিলাত ফেরত (১৯২১)
বাঙালির প্রযোজনায়, বাঙালির তৈরি স্টুডিওতে বাংলা কাহিনিচিত্র নির্মাণের প্রথম প্রয়াস ছিল ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি। তাদের তৈরি ছবি বিলাত ফেরত (১৯২১) বাঙালির তৈরি প্রথম চিত্রগৃহ রসা থিয়েটারে (পরে পূর্ণ) মুক্তিলাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে ডিজি তখন হায়দ্রাবাদে আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ। ছুটিতে কলকাতায় এসে সিনেমার টানে যাতায়াত শুরু করলেন ম্যাডানে। ইচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ নিয়ে ছবি করবেন। ইতিমধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল নীতিশ লাহিড়ির সঙ্গে। ব্যারিস্টার নীতিশ তখন ম্যাডানদের আইনি উপদেষ্টা। দুজনে মিলে বাঙালি ফিল্ম কোম্পানি গড়ার নেশায় মেতে উঠলেন। চাকরি ছাড়লেন দুজনেই। টাকা ঢালতে এগিয়ে এলেন নামকরা বালতি ব্যবসায়ী পি এন দত্ত। প্রথমে ২১, পরে ৩৪ নম্বর মোহনবাগান লেনে খোলা হল অফিস। আর বনহুগলীতে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ী জৈনদের বাগানবাড়ি লিজ নিয়ে খুলল স্টুডিও। ম্যাডান কোম্পানি ছেড়ে এলেন ক্যামেরাম্যান জ্যোতিষ সরকার। ডিজির গল্প নিয়ে নীতিশের পরিচালনায় তৈরি হল কমেডি ছবি বিলাত ফেরত। সাড়া পড়েছিল খুব। তবে ছবির মান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মেলে। পরের দুটো ছবি চলেনি তত। ইতিমধ্যে নীতিশ আর ডিজির মতবিরোধ শুরু হয়েছিল ভাল রকম। তৃতীয় ছবির (এটি পরে তৈরি হয়েও আগে মুক্তি পেয়েছিল) মাঝপথেই ডিজি হায়দ্রাবাদ ফিরে যান। এ দিকে বাজারে মার খেয়ে দত্তরা হাত তুলে নিলেন। নীতিশ তার মধ্যেও রামায়ণ কাহিনি নিয়ে চতুর্থ একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সে আর শেষ হয়নি। নীতিশের কাছ থেকে স্টুডিওর যাবতীয় সরঞ্জাম কিনে নিলেন শিশির ভাদুড়ী তাঁর তাজমহল স্টুডিওর জন্য। তিনটি ছবি করেই ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেল। জৈনদের সেই বাগানবাড়ির অস্তিত্ব অনেক দিনই নেই। প্রতিবন্ধী হাসপাতাল (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর লোকোমোটর ডিজএবিলিটিজ) এখন যেখানে অবস্থিত, ওটাই আগে ছিল সেই বাগানবাড়ি। অর্থাৎ ইন্দো ব্রিটিশ ফিল্ম কোম্পানির স্টুডিও।
পুনশ্চ
নীতিশ তাঁর অসমাপ্ত রামায়ণ-নির্ভর ছবিটিতে প্রতিষ্ঠিত অভিনেতাদের পাশাপাশি কয়েক জন সাহিত্যিককেও নিয়েছিলেন। হেমেন্দ্রকুমার রায়, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রেমাঙ্কুর আতর্থীরা অভিনয় করবেন বলে ঠিক হয়েছিল। হেমেন্দ্রকুমার পেয়েছিলেন জনকের চরিত্র।