স্টুডিও বিবরণ

প্রথম পাতা > স্টুডিও বিবরণ
ফিল্ম কর্পোরেশন/ ইন্দ্রলোক

ফিল্ম কর্পোরেশন/ ইন্দ্রলোক


ঠিকানা: বাবুরাম ঘোষ রোড

কার্যকাল: ১৯৩৭-১৯৫২?

প্রথম ছবি: আশা (১৯৩৮, হিন্দি)

বিরাট ধুমধাম করে বড় পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু। ডিরেক্টর এম এল খৈতান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মদনগোপাল কাবরা। সারা দেশ থেকে কলাকুশলীরা আসবেন। বাংলা, হিন্দি দু’রকম ছবিই তৈরি হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকবে। অর্থাৎ এক কথায় হালফিলের ভাষায় বলতে গেলে একটা এ১ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠার দাবি নিয়ে ১৯৩৭ সালেই হাজির হয়েছিল ফিল্ম কর্পোরেশন স্টুডিও। বাবুরাম ঘোষ রোডে সাত একর জমির উপরে অটোমেটিক ল্যাবরেটরি, মিচেল ক্যামেরা, আর সি এ শব্দযন্ত্র, ব্যাক প্রোজেকশনের সুবিধা, কী ছিল না? একসঙ্গে ৬টা সেট পড়ার মতো বন্দোবস্ত। স্টুডিও নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ব্যালার্ড টমসন ও ম্যাথুসের হাতে। শব্দযন্ত্র বসাতে ছুটে এসেছিলেন আর সি এ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ ই পোলার্ড। নিজস্ব ব্যানারে এই স্টুডিওয় তোলা প্রথম ছবি আশা (১৯৩৮, হিন্দি)। এর পরে ‘দ্য রাইজ’ নামে আরও একটি হিন্দি ছবির কাজ শুরু হয়। তৃতীয় ছবি, বাংলা। সুশীল মজুমদারের পরিচালনায় হিট ছবি রিক্তা (১৯৩৯)। নিউ থিয়েটার্স থেকে বেরিয়ে প্রমথেশ বড়ুয়ার প্রথম সাফল্য আসে ফিল্ম কর্পোরেশনেই। তত দিনে স্টুডিওর মালিকানা গিয়েছে কৃষিণ মুভিটোনের হাতে। বড়ুয়ার পরিচালনায় ১৯৪০ সালের ছবি ‘শাপমুক্তি’ সুপারহিট হয়। এই ছবিতেই আত্মপ্রকাশ করেন রবীন মজুমদার। হিন্দি ছবির নামী পরিচালক কেদার শর্মা নিউ থিয়েটার্সের পাশাপাশি ফিল্ম কর্পোরেশনেও ‘দিল হি তো হ্যায়’ (১৯৩৯), ‘চিত্রলেখা’-র (১৯৪১) মতো ছবি পরিচালনা করেন। ইতিমধ্যে আবার পরিবর্তন। স্টুডিওর নতুন মালিক এ বার কানাইলাল কানোরিয়া। তবু এগোচ্ছিল কাজ। কিন্তু বাদ সাধল বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ম ইউনিট এই স্টুডিও অধিগ্রহণ করে। যুদ্ধ শেষের পরে স্টুডিও ফেরত এলেও অংশীদারদের অন্তর্দ্বন্দ্বে সেটি লিকুইডেশনে চলে যায়। ফিল্ম কর্পোরেশনের এখানেই ইতি। ফিল্ম কর্পোরেশন মরলেও কালী ফিল্মসের পিছন দিকে অবস্থিত এই স্টুডিওর প্রাণভোমরা কিন্তু তখনও মরেনি। নব পরিচয় নিয়ে সে মঞ্চে ফিরল ১৯৪৭ সালে। নাম হল ইন্দ্রলোক। শেয়ার কিনলেন ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর মালিক শেঠ ইন্দ্রকুমার কারনানি। স্টুডিওর দায়িত্ব পেলেন নিউ থিয়েটার্সের প্রাক্তনী পি এন রায়। কলাকুশলীদের মধ্যে এলেন শব্দযন্ত্রে মধু শীল ও মান্না লাডিয়া, ক্যামেরায় সুহৃদ ঘোষ, ল্যাবরেটরিতে শৈলেন ঘোষাল। ভুলি নাই, প্রিয়তমা-র মতো বিখ্যাত সব ছবি হয়েছে এই পর্বেই। ১৯৪৮ সালের শেষের দিকে পি. এন. রায় সরে গেলেন। পুরোপুরি দায়িত্ব গ্রহণ করলেন কারনানি। এ বার ম্যানেজার নিযুক্ত হলেন এম এস সুবেদার। কিন্তু না, খুব বেশি দিন চলল না স্টুডিও। পঞ্চাশের দশকের গোড়াতেই তার আয়ু শেষ হল। ইন্দ্রপুরীতেই পূর্ণ মনোযোগ দিলেন কারনানিরা। তবে সত্তরের দশক পর্যন্ত ইন্দ্রপুরীর প্রধান রসায়নাগার ইউনাইটেড সিনে ল্যাবরেটরি এই ঠিকানাতেই ছিল। তা বাদে ইস্ট ইন্ডিয়ার মতোই এই জমিরও অনেকটা অংশে অস্থায়ী বসতি তৈরি হয়ে যায়। বহু পরে স্টুডিওর এই জমিতে সরকারি আবাসন ওঠে।

নির্বাচিত বাংলা চিত্রপঞ্জী


বাংলা চিত্রপঞ্জী 

এই ছবিগুলি ফিল্ম কর্পোরেশনের প্রযোজনায় ফিল্ম কর্পোরেশন স্টুডিওতে নির্মিত। 

রিক্তা (১৯৩৯), তটিনীর বিচার (১৯৪০), অমর গীতি (১৯৪০), শাপমুক্তি (১৯৪০), প্রতিশোধ (১৯৪১) 

এই ছবিগুলি ফিল্ম কর্পোরেশনে গৃহীত। 

কবি জয়দেব (১৯৪১), অপরাধ (১৯৪২), পাপের পথে (১৯৪৩) 

এই ছবিগুলি ইন্দ্রলোকে গৃহীত। 

ভুলি নাই (১৯৪৮), প্রিয়তমা (১৯৪৮, ইন্দ্রপুরীর সঙ্গে যৌথ ভাবে), দিনের পর দিন (১৯৪৯), অপবাদ (১৯৫০), বিপ্লবী ক্ষুদিরাম (১৯৫১), ভিন দেশের মেয়ে (১৯৫২)

পুনশ্চ

ছবি মুক্তির দিনে ছবির শুটিং? এমন অত্যাশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী ছিল ফিল্ম কর্পোরেশনই। মুক্তির আগের দিন ‘শাপমুক্তি’ ছবিটা দেখতে গিয়ে বড়ুয়ার মনে হল, ৫ নম্বর রিলে কিছু ত্রুটি থেকে গেছে। পর দিন সকাল আটটার মধ্যে সবাইকে স্টুডিওতে ডেকে পাঠালেন। শুটিং-এডিট সেরে যখন প্রিন্ট হচ্ছে, তত ক্ষণে উত্তরায় শো শুরু হয়ে গিয়েছে। ফাইনাল প্রিন্ট রেডি করে রবীন মজুমদারকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়লেন বড়ুয়া। পর্দায় তখন ৪ নম্বর রিল চলছে। ৫ নম্বর রিল স্বস্থানে ঢুকে গেল।

আরও ছবি