ঠিকানা: আর এন টেগোর রোড, দক্ষিণেশ্বর
কার্যকাল: ১৯৪৬-১৯৬২?
প্রথম ছবি: নন্দরাণীর সংসার (১৯৪৮)
দক্ষিণেশ্বরে ইস্টার্ন টকিজ স্টুডিও তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। ইস্টার্ন টকিজ ফিল্মসের ব্যানারে অবশ্য ছবি হতে থেকেছে আগে থেকেই। ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে মুক্তি পায় এদের প্রথম ছবি, নীলাঙ্গুরীয়। তার পর ওই বছরই সুপারডুপার হিট ছবি ‘শহর থেকে দূরে’। সংস্থার কর্ণধার সুরেন্দ্ররঞ্জন সরকার ছিলেন অরোরার বসু পরিবারের আত্মীয়। নিজস্ব স্টুডিওয় তৈরি ওঁদের একমাত্র ছবি নন্দরাণীর সংসার (১৯৪৮)। তার পর থেকে স্টুডিওয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছবিই উঠেছে। স্টুডিওর যন্ত্রপাতির মধ্যে ছিল আর.সি.এ রেকর্ডার, মিচেল ক্যামেরা, আইমো ক্যামেরা, ভিনটেন পাথ ফাইন্ডার প্রভৃতি। ছিল একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি। শব্দযন্ত্রে পরিতোষ বসু ও সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ক্যামেরার দায়িত্বে ছিলেন দিব্যেন্দু ঘোষ ও শচীন্দ্র দাশগুপ্ত।
খেয়াল করলে দেখা যাবে, ন্যাশনাল সাউন্ড স্টুডিওর এমপি যুগ আর ইস্টার্ন টকিজের ভাল সময়টা প্রায় একই সঙ্গে চলেছে। দু’টি স্টুডিওর অন্তিম ক্ষণও ঘনিয়েছে প্রায় একই সঙ্গে, ষাটের দশকের প্রথমার্ধে। এদের অস্ত গমনের সঙ্গেই উত্তর কলকাতা থেকে ফিল্ম স্টুডিওর কারবার চিরতরে মুছে যায়। পুবের অরোরা ছাড়া বাংলা ছবির পুরো ভরকেন্দ্রই টালিগঞ্জে গিয়ে পড়ে।
দক্ষিণেশ্বরে আর এন টেগোর রোড ধরে এগোলে ডান হাতে পড়ে ইস্টার্ন টকিজের চত্বর। ওখানে এখন অন্য কারখানা হয়েছে। কিন্তু লাল রং করা ইঁটের পুরনো ইমারত, স্টুডিও ভবনের মার্কামারা আদল দেখলে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না ইস্টার্ন টকিজকে। বিশেষ অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখেছি, চত্বরটা পাল্টায়নি তেমন। পুরনো বাড়িগুলো আছে সবই, অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে এই যা। শুটিং ফ্লোর রূপান্তরিত হয়েছে কারখানার ফ্লোরে। ল্যাবরেটরি, অফিস, অন্য বাড়িগুলোও আছে। থেকে গেছে পুকুরটিও। এক কথায় বলতে গেলে, ওটা যে একটা পরিত্যক্ত স্টুডিও, প্রতি পদেই অনুভব করায় ওই চত্বর। জমিটির মালিক আজও সরকার পরিবারই।
পুনশ্চ
ফরাসি চিত্রপরিচালক জাঁ রেনোয়া যখন দ্য রিভার (১৯৫১) ছবি তুলতে কলকাতায় এলেন, এই ইস্টার্ন টকিজ হয়ে উঠেছিল তাঁর অন্যতম কর্মস্থল। নদী, রেললাইন এবং স্টুডিও একসঙ্গে হাতের কাছে মিলল এখানেই। ব্যারাকপুরের গোয়ালিয়র রাজবাড়ি ছিল প্রধান লোকেশন। দক্ষিণেশ্বর থেকে তারও দূরত্ব বেশি নয়। কলকাতায় রেনোয়ার আগমন বাংলা ছবির জগতে কী দূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল, সে কথা আজ আর কারও অজানা নয়। সেই ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের শরিক ছিল ইস্টার্ন টকিজও।