লস্ট?

প্রথম পাতা > আমাদের ছবি
প্যারাডাইস একসময়ে ছিল কলকাতার সিনেমাপ্রেমীদের নন্দনকানন। এসপ্ল্যানেডের অগুন্তি থিয়েটারের মধ্যে টাইগার, গ্লোব, জ্যোতি, সোসাইটি, এলিট এবং প্যারাডাইসেই সবচেয়ে বেশি ভিড় হত। প্রেক্ষাগৃহটির মূল পর্দাকে ঢেকে রাখা তিন থাক পর্দার বাহার থেকে শুরু করে ছবির বিরতি চলাকালীন আধখোলা দরজার ফাঁক দিয়ে নির্গত এসির ঠান্ডা হাওয়ার আরাম, প্যারাডাইসের জৌলুস ও আকর্ষণের এমন নানা খুঁটিনাটি প্যারাডাইস-প্রেমীদের স্মৃতিতে আজও সযত্নে সঞ্চিত। জুনেইদ আহমেদ এই প্রেক্ষাগৃহের এমনই একজন পৃষ্ঠপোষক। বিজয় চৌধুরীর তৈরি ছবিতে হাতিবাগানের এই অধিবাসীর মুখে পৃথিবীর বুকে প্যারাডাইস-রূপী স্বর্গের স্মৃতিরোমন্থনকালে সঙ্গী হয়েছে বিএফএ। কেন বিএফএ এই ছবি করল? কলকাতায় মাল্টিপ্লেক্সের জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্যারাডাইস নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালালেও ২০১৪-১৫ সাল থেকেই প্রেক্ষাগৃহটির ব্যবসায়িক আয় কমতে থাকে। অতিমারির দাপটে ব্যবসার আরওই অবনতি ঘটায় শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের মার্চ মাসে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় প্যারাডাইস। বিএফএ অবশ্য বিশ্বাস করে, মনে রাখার মধ্যে দিয়ে সব কিছুরই অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা সম্ভব। প্যারাডাইসও এতে একমত! ভাবী প্রজন্মের জন্য কৃত এই সংরক্ষণ কর্মের জন্য বিজয় চৌধুরী এবং কোরক মিশ্রর চেয়ে সুযোগ্য আর কেই বা হতে পারতেন? জুনেইদ আহমেদের সহায়তায় এই পরিচালক-সম্পাদক জুটি মিলে প্রেক্ষাগৃহটির সম্মোহনী আকর্ষণকে দৃশ্যায়িত কাহিনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্যারাডাইসের মতন একটি একক পর্দার প্রেক্ষাগৃহ কী ভাবে কবি আমির খসরুর সেই অবিস্মরণীয় "অগর ফিরদৌস বার রু-ই জমিন আস্ত/হামিন আস্ত-ও হামিন আস্ত-ও হামিন আস্ত" (যদি পৃথিবীতে কোথাও স্বর্গ থেকে থাকে/ তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই) পংক্তিটির সাথে সমার্থক হয়ে উঠল, এই ছবিটি তারই সাক্ষ্য বহন করে।




বিজয় চৌধুরী বিজ্ঞাপন সংস্থায় তাঁর প্রতিশ্রুতিময় কর্মজীবন ত্যাগ করেছেন। আর কে স্বামী বিবিডিও প্রাইভেট লিমিটেডের আর্ট ডিরেক্টরের কাজও তিনি ছেড়ে দেন, মনের মত কাজ করবেন বলে। ভগ্নস্তূপ নিয়ে রোমান্টিক হয়ে পড়া তাঁর প্যাশন ।বিস্মৃত ঐতিহ্যের দিকে ক্যামেরা বসানো তাঁর শখ। ১৯৮৭ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েট হন সরকারি চারুকলা-কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে। এখন কাজ করছেন আলোকচিত্রী এবং ভিসুয়াল কমিউনিকেটর হয়ে। বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন বিজয়; যেমন কমনওয়েলথ এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলার ফটো অ্যাওয়ার্ড। প্রসিদ্ধ প্রাইভেট পত্রিকায় দুবার ছাপা হয়েছে তাঁর ছবি। ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারিও প্রকাশ করেছে তাঁর সাদা কালো ছবি। ২০০০ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন আলোকচিত্রে সিনিয়র ন্যাশনাল ফেলোশিপ । অন্যান্য কাজের সঙ্গে সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন । তাঁর প্রথম তথ্যচিত্র 'ক্ষত' বিশ্বের ১৫ টি তথ্যচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে,২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর। দ্বাদশ ইস্তাম্বুল ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হয়েছিল এই ছবিটি। বাংলাদেশ সিলেট তথ্যচিত্র উৎসবে তা শ্রেষ্ঠচিত্রের পুরস্কার লাভ করে; স্পেনের FICAR& ২০১৮- র উৎসবে বিশেষ জুরি উল্লেখের সম্মানে ভূষিত হয়; এছাড়া আনন্দলোক শর্টকাট, শিলিগুড়ি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র উৎসবেও শ্রেষ্ঠ চিত্রের সম্মান লাভ করে। তাঁর Undivided Solitude ছবিটি PSBT Film Challenge প্রতিযোগিতায় দুটি পুরস্কার পেয়েছে--শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য FUR স্বর্ণকমল এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার । এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা PSBT এবং ফাউন্ডেশন ফর ইউনিভার্সাল রেসপনসিবিলিটি অফ হিজ হোলিনেস দলাই লামা। নয়া দিল্লির তৃতীয় হ্যাবিটাট ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে এই ছবিটি নির্বাচিত হয় এবং আনন্দলোক শর্টকাটের স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র উৎসবেও শ্রেষ্ঠ চিত্রের পুরস্কারে সম্মানিত হয়। ২০২২ সালে বিজয় চৌধুরী তৈরি করেছেন 'আমার ছেলে আর তার ঠাকুরদা' ছবিটি। বিষয় : বৃদ্ধ বয়সের শূন্যতাবোধ। ছবিটির নেপথ্য সঙ্গীত রচনা করেন বিখ্যাত সুরকার তাজদার জুনেইদ। কেরালার চতুর্দশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র উৎসবে(IDSFFK)এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের সম্মান লাভ করেছে। মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও তা দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালে সাউথ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে এই ছবি সত্যজিৎ রৌপ্য পদক এবং নবম শিলিগুড়ি শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল২০২২-এ শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের পুরস্কারে ভূষিত হয়।