চলচ্চিত্র যে জীবনের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে, তার পিছনে আছেন শুধু ক্যামেরার সামনের মানুষই নন; আছেন আরো অনেক অখ্যাত মানুষ। চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁদের আপ্রাণ ভালোবাসার কথা আমরা স্মরণ করি। আমরা অভিভূত এই রকম একজন মানুষের জীবন কাহিনী শুনে, নবতিপর রবিন শেঠ। নব্বই বছর বয়সে পৌঁছেও তিনি রোজ সাইকেলে করে ছবিঘরে চলে আসতেন হলের দায়িত্ব নিতে ।পারিশ্রমিক নয় ,সিনেমার প্রতি ভালোবাসার টানে। তাঁর মতো মানুষের এই দায়বোধের কাহিনি আমরা শোনাতে চেয়েছিলাম বিশ্বের মানুষকে। তাই এই অতিবৃদ্ধ মানুষটিকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র করার জন্য আমরা যোগাযোগ করি পরিচালক বিজয় চৌধুরী, সম্পাদক কোরক মিশ্র এবং তাঁদের টিমের সঙ্গে।
সিনেমাটির নাম দিয়েছি 'দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সিনেমা'। এই ছবি বাংলা সিনেমার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।আমরা তথ্য জোগাড় করেছি পুরনো সংগ্রহশালা খুঁজে ।সেইসব নথিপত্র দেওয়ানেওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন মিনার- বিজলী -ছবিঘরের মালিক সুরঞ্জন পাল। আমাদের নায়ক:রবিন শেঠ। তিনি জানালেন, আগে তাঁর কাছে কাহিনীচিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব এসেছিল,কিন্তু তিনি রাজি হননি। তাঁকে মুখ্য চরিত্রে রেখে একটি ছবি তোলার প্রস্তাব তাঁর কাছে এই প্রথম।
সিনেমার প্রতি রবিন শেঠের দুর্নিবার ভালবাসা, আমরা পেয়েছি তার উত্তাপ। আপনি?
এবার বলি পরিচালক সম্পর্কে
বিজয় চৌধুরী বিজ্ঞাপন সংস্থায় তাঁর প্রতিশ্রুতিময় কর্মজীবন ত্যাগ করেছেন। আর কে স্বামী বিবিডিও প্রাইভেট লিমিটেডের আর্ট ডিরেক্টরের কাজও তিনি ছেড়ে দেন, মনের মত কাজ করবেন বলে। ভগ্নস্তূপ নিয়ে রোমান্টিক হয়ে পড়া তাঁর প্যাশন ।বিস্মৃত ঐতিহ্যের দিকে ক্যামেরা বসানো তাঁর শখ ।
আলাপ করুন বিজয় চৌধুরীর সঙ্গে। ১৯৮৭ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েট হন সরকারি চারুকলা-কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে। এখন কাজ করছেন আলোকচিত্রী এবং ভিসুয়াল কমিউনিকেটর হয়ে। বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন বিজয়; যেমন কমনওয়েলথ এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলার ফটো অ্যাওয়ার্ড। প্রসিদ্ধ প্রাইভেট পত্রিকায় দুবার ছাপা হয়েছে তাঁর ছবি। ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারিও প্রকাশ করেছে তাঁর সাদা কালো ছবি। ২০০০ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে তিনি পেয়েছেন আলোকচিত্রে সিনিয়র ন্যাশনাল ফেলোশিপ ।
অন্যান্য কাজের সঙ্গে সামাজিক অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপর কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন । তাঁর প্রথম তথ্যচিত্র 'ক্ষত' বিশ্বের ১৫ টি তথ্যচিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে,২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর। দ্বাদশ ইস্তাম্বুল ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নির্বাচিত হয়েছিল এই ছবিটি। বাংলাদেশ সিলেট তথ্যচিত্র উৎসবে তা শ্রেষ্ঠচিত্রের পুরস্কার লাভ করে; স্পেনের FICAR& ২০১৮- র উৎসবে বিশেষ জুরি উল্লেখের সম্মানে ভূষিত হয়; এছাড়া আনন্দলোক শর্টকাট, শিলিগুড়ি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র উৎসবেও শ্রেষ্ঠ চিত্রের সম্মান লাভ করে। তাঁর Undivided Solitude ছবিটি PSBT Film Challenge প্রতিযোগিতায় দুটি পুরস্কার পেয়েছে--শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য FUR স্বর্ণকমল এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার । এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা PSBT এবং ফাউন্ডেশন ফর ইউনিভার্সাল রেসপনসিবিলিটি অফ হিজ হোলিনেস দলাই লামা।
নয়া দিল্লির তৃতীয় হ্যাবিটাট ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে এই ছবিটি নির্বাচিত হয় এবং আনন্দলোক শর্টকাটের স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্র উৎসবেও শ্রেষ্ঠ চিত্রের পুরস্কারে সম্মানিত হয়।
২০২২ সালে বিজয় চৌধুরী তৈরি করেছেন 'আমার ছেলে আর তার ঠাকুরদা' ছবিটি। বিষয় : বৃদ্ধ বয়সের শূন্যতাবোধ। ছবিটির নেপথ্য সঙ্গীত রচনা করেন বিখ্যাত সুরকার তাজদার জুনেইদ।
কেরালার চতুর্দশ আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র উৎসবে(IDSFFK)এই ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের সম্মান লাভ করেছে। মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও তা দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালে সাউথ এশিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে এই ছবি সত্যজিৎ রৌপ্য পদক এবং নবম শিলিগুড়ি শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল২০২২-এ শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রের পুরস্কারে ভূষিত হয়।