মৃণাল সেনের মণিমানিক্যে ভরা চিত্রপঞ্জীতে চারটি তথ্যচিত্রও আছে। পুত্র কুণাল সেনের কথায়, “তথ্যচিত্র বিষয়ে বাবা খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না। কাহিনীচিত্র বানাতেই ভাল লাগত তাঁর। বাকি আর সব কিছুই তাঁর সময় নষ্ট বলে মনে হত। যে চারটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন, সেগুলিও বানিয়েছেন নেহাত দায়ে পড়ে। অন্যদের বানানো তথ্যচিত্র কিন্তু খুব উৎসাহভরেই দেখতেন, তা নিয়ে আলোচনাও কর...
নিজে তেমন না বানালেও, বেশ কিছু তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু থেকেছেন মৃণাল সেন। এর মধ্যে আছে: রেইনহার্ড হাউফ-এর টেন ডেজ্ ইন ক্যালকাটা – আ পোর্ট্রেট অফ মৃণাল সেন (১৯৮৪), সুপান্থ ভট্টাচার্যের আ ম্যান বিহাইন্ড দ্য কার্টেইন (১৯৯৮), সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও রাহুল বোস নির্মিত উইথ মৃণাল সেন (১৯৮৯), রমেশ শর্মার পোর্ট্রেট অফ আ ফিল্মমেকার (১৯৯৯), চিদানন্দ দাশগুপ্তর মৃণাল সেন রিভিজিটেড (২০০১), নৃপেন গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃণাল সেন: সেল্ফ অ্যান্ড সিনেমা (২০১৩) এবং আর ভি রামানি নির্মিত আ ডকুমেন্টারি প্রোপোজাল (২০১৪)। হাউফের তথ্যচিত্রটির কেন্দ্রে ছিল দুই চিত্রনির্মাতার মধ্যে কথোপকথন, যাঁরা দুই ভিন্ন মহাদেশের হলেও কতকটা একইরকম সমস্যা এবং উদ্বেগের ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন। দাশগুপ্তর তথ্যচিত্রটির শুটিং চলাকালীন বর্ষীয়ান পরিচালক নিজেই জানিয়েছিলেন যে এই কাজটি তাঁকে নিয়ে বানানো অন্যান্য তথ্যচিত্রের থেকে আলাদা, কারণ “দাশগুপ্ত অনেকদিনের বন্ধ, কাজেই আমি শুধুই তাঁর হাতের পুতুল ছিলাম না।” ৪৪ মিনিটের আ ডকুমেন্টারি প্রোপোজাল-এর চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, পরিচালনা এবং প্রযোজনা— সবই করেন রামানি নিজেই। ছবিটি তৈরির পিছনে বেশ মজার একটা গল্প আছে। ২০১৩ সালে রামানি যখন কার্যসূত্রে কলকাতায় ছিলেন, ফিল্মস ডিভিশনের বীরেন্দর কুণ্ডু-র অধীনস্থ কিছু আধিকারিক স্থির করেন মৃণাল সেনকে নিয়ে একটি ছবি বানানো হবে। তাঁরা পরিচালকের পদ্মপুকুরের বাড়িতে যাচ্ছিলেন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সেনের কাজের দীর্ঘদিনের ভক্ত রামানি এই সুযোগে ক্যামেরা নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন। কথাবার্তা যতক্ষণে শেষ হয়, রামানি বুঝতে পারেন যে তাঁর ক্যামেরায় ইতিমধ্যেই ধরা পড়ে গেছে একটা ছবি বানানোর উপযুক্ত উপাদান। ২০১৩ সালে সেলিব্রেটিং মৃণাল সেন নামে ৪ পর্বের একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়, যার কেন্দ্রে ছিল পরিচালকের সঙ্গে প্রখ্যাত চিত্রসমালোচক সমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু কথোপকথন। কাজটি পরিচালনা করেন অনন্যা ব্যানার্জী, নয়াদিল্লির দূরদর্শন দপ্তরের একজন সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার। ছবিটিতে মৃণাল সেনের বিভিন্ন ছবির অংশবিশেষের পাশাপাশি ছিল তাঁর পুত্র কুণাল এবং একাধিক নামীদামী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের কথা ও মতামত; যেমন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, ওম পুরী, নাসিরুদ্দিন শাহ, ধৃতিমান চ্যাটার্জী, অন্নু কাপুর, সুহাসিনী মূলে, মিঠুন চক্রবর্তী, নন্দিতা দাস, রঞ্জিত মল্লিক, মমতা শঙ্কর, অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত, বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখোপাধ্যায়, এম কে রায়না, গবিন্দ নিহালনি, শ্যাম বেনেগাল, জহর সরকার এবং সুমন মুখোপাধ্যায়। গবেষণা: গীতি সেহগাল