চিত্রগৃহের বিবরণ

প্রথম পাতা > চিত্রগৃহের বিবরণ
প্রাচী

প্রাচী


ঠিকানা: ১২৪, এজেসি বোস রোড। কলকাতা ১৪

শুভারম্ভ: ২৭.৮.১৯৪৮

প্রদর্শিত প্রথম ছবি: তরুণের স্বপ্ন

এখন: চলছে

প্রাচীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ বসু। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র, এমএসসি এবং এলএলবি ডিগ্রিও ছিল। কিন্তু আইন অনুশীলন করেননি। বরং তাঁর আগ্রহ ছিল খেলাধুলা ও চলচ্চিত্রে। জিতেন্দ্রর একটি ছাপাখানা ছিল, যেখানে স্পোর্টস অ্যান্ড স্ক্রিন নামে একটি পত্রিকা ছাপা হত। প্রাচী ছাড়া সুশীল এবং ভারতী নামে তাঁর আরো দুটো হল ছিল বারাণসীতে। কলকাতার রংমহলও বিক্রি হওয়ার আগে জিতেন্দ্রর মালিকানাধীন ছিল। ক্যাম্পবেল মেডিকেল কলেজের (বর্তমানে এনআরএস) বিপরীতে প্রাচী খুলেছিলেন জিতেন্দ্র। ১৯৪৮ সালের জন্মাষ্টমীতে ৭৮৪টি আসনের সিনেমাটি উদ্বোধন করেছিলেন কলকাতার তৎকালীন মেয়র সুধীরচন্দ্র রায়চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বিএন সরকার, দেবকী বসু, বিমল রায়, প্রেমাঙ্কুর আথার্থী, রাইচাঁদ বড়াল, গোষ্ঠ পাল, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, ফণী পাল এবং মধু বসু। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের একটি কনসার্টও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অংশ ছিল। বিধানচন্দ্র রায়, সত্যজিৎ রায়, উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বাংলা চলচ্চিত্রের একাধিক প্রিমিয়ার হয়েছে এখানে। প্রতি রবিবার ইংরেজি ছবির মর্নিং শো অনুষ্ঠিত হত। ২৫শে বৈশাখ দেখানো হত রবীন্দ্র-কাহিনী। কর্মী সমস্যার কারণে প্রাচী আশির দশকে দু’বার বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু হলটি তখনও খুবই জনপ্রিয়। ত্রয়ী (১৯৮২), গুরুদক্ষিণা (১৯৮৭) এবং অমর সঙ্গীর (১৯৮৭) মতো ছবি এখানে খুব ভাল ব্যবসা করেছিল। জিতেন্দ্র বিয়ে করেননি। তাঁর ভাগ্নে দীপেন্দ্রনাথ বসু পারিবারিক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। দিনের বেলা সিনেমা দেখাশোনা করতেন, নি সন্ধ্যায় কলকাতা গার্লস কলেজে পড়াতেন। দীপেন্দ্রনাথ এই কলেজটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯৯১-এ দীপেন্দ্রনাথ এবং তাঁর স্ত্রী কল্পনা ২০০৪ সালে মারা গেলে পরের বছর জিতেন্দ্র দীপেন্দ্রনাথের মেয়ে বিদিশার নামে সম্পত্তি হস্তান্তর করেন। তার পরে তিনি বারাণসীতে চলে যান এবং ২০০৬ সালে মারা যান। বিদিশাই এর পর প্রাচীর আধুনিকীকরণের ভার নেন। ২০১১ সালে নতুন আসন বসল। ২০১৩ সালে সারাউন্ড সাউন্ড চালু হল। পর্যায়ক্রমে সংস্কার চলতে থাকল। বাংলায় টিকিট প্রিন্ট করার জন্য ডেডিকেটেড সফটওয়্যার পেতেও চেষ্টা চালালেন বিদিশা। শুভদৃষ্টি (২০০৫), চিরদিনই তুমি যে আমার (২০০৭), মন মানে না (২০০৮), পরান যায় জ্বলিয়া রে (২০০৯) এবং চ্যালেঞ্জ (২০০৯) প্রাচীতে ভাল ব্যবসা করে। দারুণ চলে চাঁদের পাহাড় (২০১৩)। এই সময় থেকেই দর্শক ধরে রাখতে হিন্দি ছবি দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাদ্রাজ ক্যাফে (২০১৩) এই পর্বে প্রদর্শিত প্রথম হিন্দি ছবি। দুপুরের শো-এ রইল ইংরেজি ছবি। কলেজ-পড়ুয়াদের কাছে সেটা জনপ্রিয় হয়। ২০১৬ সালে আসন কমিয়ে 500 করা হল। ২০১৭ সালে এল 3D পর্দা। কিন্তু সব অঙ্ক বদলে দিল কোভিড। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে কারণে ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হল। শেষ পর্যন্ত বিদিশা এম বাজারের ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েছেন। ২০০ আসন নিয়ে তার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে প্রাচী। মুখোশ এবং বেল বটম, এই দুটি ছবি নিয়ে ১৯ আগস্ট ২০২১ থেকে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে তার।

পুনশ্চ

বাংলা ভাষার পূজারী জিতেন্দ্রনাথ তাঁর প্রেক্ষাগৃহে সব কিছু বাংলায় লেখা চালু করেছিলেন। টিকিট হল দর্শনী। ব্যালকনি হয়েছিল শীর্ষভিত, ফ্রন্ট স্টল হল প্রথমা, মিডল স্টল মধ্যমা, রিয়ার স্টল পুরোভাগ।

উল্লেখযোগ্য ছবি (১৯১৭-১৯৯৯)

মানময়ী গার্লস স্কুল (১৯৫৮), পরশ পাথর (১৯৫৮), বিচারক (১৯৫৯), নীল আকাশের নীচে (১৯৫৯), নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে (১৯৫৯), সোনার হরিণ (১৯৫৯), বাইশে শ্রাবণ (১৯৬০), গঙ্গা (১৯৬০), মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), স্বয়ম্বরা (১৯৬১), অভিযান (১৯৬২), মহানগর (১৯৬৩), সাত পাকে বাঁধা (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), নায়ক (১৯৬৬), বালিকা বধূ (১৯৬৭), কোনি (১৯৮৬), গুপী বাঘা ফিরে এল (১৯৯২), কালপুরুষ (১৯৯৪), যোদ্ধা (১৯৯৭), কালরাত্রি (১৯৯৭)

আরও প্রাচী ছবি