ঠিকানা: ৮৩ বিধান সরণি, কলকাতা ৬
শুভারম্ভ: ২০.১২.১৯৩০ (চিত্রা)
প্রদর্শিত প্রথম ছবি: শ্রীকান্ত
এখন: ভাঙা পড়েছে
আগের নাম : চিত্রা
মিত্রার আগের নাম ছিল চিত্রা। জমিটি ছিল নরেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্রের। সেটি ইজারা নিয়ে বি এন সরকার ১৯৩০ সালে চিত্রা সিনেমা হল তৈরি করেন। শ্রীকান্ত ছবি দিয়ে হলের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন সুভাষচন্দ্র বসু। নেতাজি ব্রিটিশ পুলিশের নিরাপত্তা নিতে চাননি বলে সেদিন স্থানীয় যে যুবকরা ফুটবল ম্যাচের টিকিট বিক্রি আর ভিড় সামলানোর কাজ করত, তাদের ডেকে আনা হয়েছিল এখানে। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত চিত্রা সরকারদের হাতেই ছিল। তার পর ইজারার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় হলটির অধিকার ফিরে পেতে আদালতে যান নরেন্দ্রকৃষ্ণের ছেলে, আইনজীবী হেমন্তকৃষ্ণ। তিন বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে আদালত বিএন সরকারকে চিত্রা খালি করে দিতে বলে। ১৯৬৩ সালে চিত্রার নাম পরিবর্তন করে মিত্রা রাখা হয়। মিত্রার উদ্বোধন হয় সে বছরের পয়লা বৈশাখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএন সরকার, অতুল্য ঘোষ। নরেন্দ্রকৃষ্ণের আগ্রহে দেখানোও হল নিউ থিয়েটার্সেরই ছবি, ডাক্তার। তার পর দারুণ চলল উত্তম কুমারের দেয়া নেয়া (১৯৬৩) তবে দেয়াল থেকে নিউ থিয়েটার্সের প্রতীক আর জীবতাং জ্যোতিরেতু ছায়াম লেখাটি মুছে ফেললেন হেমন্তকৃষ্ণ। বদলে এল দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর আঁকা ছবি। হেমন্তকৃষ্ণ ১৯৮৬ সালে মারা যান। তার অনেক আগেই অবশ্য, ১৯৭৬ সালে হলের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর ছোট ছেলে দীপেন মিত্র। বড় ছেলে নীরেন্দ্রকৃষ্ণ ছিলেন ব্যস্ত উকিল, পরে বিচারক হন। দীপেনও উকিল। তবে প্র্যাকটিস করতেন না। তাঁর শখ ছিল বিলিয়ার্ড ও বেহালা। দারোয়ানরা একদিন তাঁকে হলে ঢুকতেই দিতে চায়নি, কারণ তারা তাঁকে দেখেইনি আগে। এ হেন দীপেনই সিনেমা হলকে তাঁর জীবন করে তুললেন। প্রবীণদের মনে আছে তিনি সকাল ৭টায় সাদা ধুতি-কুর্তা পরে আসতেন এবং নাইট শো শেষে মেন সুইচ বন্ধ করে তবে যেতেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর দীপেন হলের সংস্কা্রে মন দেন। ৯৪৭ আসন বেড়ে হয় ১১৫৮। তিরিশের দশকেই এক বার একটি ছোট অগ্নিকাণ্ডের ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দীপেন ২৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে আবার এসি বসালেন। ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড, ইউএফও প্রজেকশন এবং ২K প্রজেকশন চালু করা হল। পর্দার আয়তন বেড়ে হল ৪০ ফুট / ২০ ফুট। ১৯৭৮ সালের বন্যায় উত্তর কলকাতার আর সব সিনেমা হল প্লাবিত হলেও মিত্রা ছিল ব্যতিক্রম। বাংলা তো বটেই, গাইড (১৯৬৫), ফুল অর পাথর (১৯৬৬), হাতি মেরে সাথী (১৯৭১), খুদা গাওয়ার (১৯৯২) মতো হিন্দি ছবিও খুব ভাল চলেছে মিত্রায়। দীপেন দায়িত্ব নিয়ে নিয়মিত হিন্দি সিনেমা দেখানোর সিদ্ধান্ত নেন। শালিমার (১৯৭৮) এর জন্য ভিড় সামাল দিতে অগ্রিম বুকিংয়ের তারিখ বুধবার থেকে সোমবারে পরিবর্তন করতে হয়েছিল। পরে উত্তর কলকাতার প্রায় সমস্ত প্রেক্ষাগৃহই হিন্দি সিনেমা দেখানো শুরু হলে দীপেন আবার কৌশল পরিবর্তন করে ইংরেজি ছবির প্রদর্শনও শুরু করেন। দ্য মমি (১৯৯৯), হলো ম্যান (২০০০) এবং টাইটানিক থ্রিডি (২০১০) মিত্রায় দেখানো হয়েছিল। 2019 সালের এপ্রিলে কেশরী স্ক্রিনিংয়ের পরে পর্দা নেমে আসে। দুর্বল স্বাস্থ্য, সিনেমা ব্যবসার প্রতি পরবর্তী প্রজন্মের অনাগ্রহ এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে মিত্রা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এটি বাজার রিটেলের কাছে বিক্রি হয়ে যায়।
পুনশ্চ
মিঠুন চক্রবর্তী একবার ডিস্কো ড্যান্সার (১৯৮২) ছবির সময় এখানে এসেছিলেন। তিন মাস ধরে চলছিল ছবিটি। দীপেনের কাছে তিনি প্রায়শই অভিযোগ করতেন যে, কীভাবে যুবক বয়সে একদিন তিনি মিত্রায় ছবি দেখতে পাননি। লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে টিকিট কিনতে এসেছিলেন। এত কয়েন নিয়ে বিরক্ত হয়ে বুকিং ক্লার্ক বলেছিলেন: 'তুমি ফিল্ম দেখবে আর আমি তোমার খুচরো গুনব'
উল্লেখযোগ্য ছবি (১৯১৭-১৯৯৯)
সপ্তর্ষি, নয়া মিছিল, শপথ নিলাম, সুজাতা, সব্যসাচী, করুণাময়ী, নিশান (ডাব্ড), বৈশাখী মেঘ, স্বামী-স্ত্রী, বোধন, সতী সাবিত্রী সত্যবান, চোখ, গৃহযুদ্ধ, লাল গোলাপ, স্বর্গসুখ, সম্রাট ও সুন্দরী, চোখের আলোয়, গণশত্রু, রাজনর্তকী, বিয়ের ফুল, লোফার, আসল নকল, মায়ের দিব্য়ি