চিত্রগৃহের বিবরণ

প্রথম পাতা > চিত্রগৃহের বিবরণ
মেনকা

মেনকা


ঠিকানা: ৫ শরৎ চ্যাটার্জী অ্যাভিনিউ, কলকাতা ২৯

শুভারম্ভ: ১৯৪৮

এখন: চলছে

চল্লিশের দশকে রবীন্দ্র সরোবরের আশেপাশের এলাকা মানে নির্জন জলা জায়গা। প্রবীণরা বলেন, এখানে তখন অনেকেই শিকার করতে আসতেন। কাছেই সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। পরবর্তী কালে এলাকাটি ক্রমে অবাঙালি বাসিন্দাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এখানেই মেনকা সিনেমার ভিত্তি স্থাপন করলেন ১৯৪৮ সালে পুলিনকৃষ্ণ রায়। পুলিনকৃষ্ণ তিনটি চা বাগানের মালিক। কার্শিয়ং-এর গৌরীশঙ্কর বাগান তাঁর কাছ থেকে কিনেই পরে ক্যাসলটন নামাঙ্কিত হয়। উত্তর আসামের গোপালকৃষ্ণ বাগানও ব্রহ্মপুত্রের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে বিক্রি করে দেন তিনি। দক্ষিণ আসামের বাগানটি থেকে যায়। তার নামও মেনকা গার্ডেন। তিরিশের দশকেই কুমারটুলি পার্কে জমি কিনে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন পুলিনকৃষ্ণ। সেই সঙ্গে জমি কেনা ছিল রবীন্দ্র সরোবর লাগোয়া শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউতেও। একবার সিনেমা দেখতে গিয়ে ভাল সিট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়লেন পুলিন। তখনই ঠিক করলেন একটা সিনেমা হল নিজে করবেন। তৈরি হল মেনকা। ১৯৫০ থেকে শুরু হল ছবি দেখানো। প্রথমে বাংলা ছবিই দেখানো হত। কিন্তু এলাকাটা অবাঙালি অধ্যুষিত হওয়ায় হিন্দি ছবিতেই সাফল্য এল বেশি। দক্ষিণ কলকাতায় হিন্দি ব্লকবাস্টার দেখানোর অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠল মেনকা। ববি, শোলে, গাইড এবং নাচে ময়ূরী এখানে রজত জয়ন্তী করে। গাইড (১৯৬৫) এর সময় দেব আনন্দ, বৈরাগ (১৯৭৬) এর সময় দিলীপ কুমার এবং সায়রা বানু, মেরা নাম জোকার (১৯৭০) এর সময় রাজ কাপুর, অমর আকবর অ্যান্টনির (১৯৭৭) সময় অমিতাভ বচ্চন এবং পারভীন বাবি, লগান (২০০১) এর সময় আমির খান এখানে এসেছিলেন। আখরি রাস্তা (১৯৮৬) এবং অমর আকবর অ্যান্টনির জন্য এত ভিড় হত যে, টিকিট বিক্রির সময় যাতে কোনও সমস্যা না হয় তার জন্য পুলিশকে ডাকতে হত। হাম আপকে হ্যায় কৌন এই সিনেমায় এক বছর ধরে চলেছিল। পুলিনকৃষ্ণের নাতি, প্রণব কুমার রায় এখন মেনকার দেখাশোনা করেন। হাম আপকে হ্যায় কৌন চারটি ট্র্যাকে রেকর্ড করা হয়েছিল। এটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনটি শুধুমাত্র মেনকা এবং হিন্দে ছিল। গুপ্ত যখন ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায়, তখন মেনকা ডলবি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পরবর্তী কালে এখানে UFO ডিজিটাল প্রজেকশন চালু করা হয়। ২০১৮ সালে অক্ষয় কুমার এবং রজনীকান্তর 2.0 রিলিজ করার সময় 3D ডলবি ডিজিটাল চালু হয়েছিল। তারও আগে ১৯৮৫ সালেই এখানে শিবা কা ইনসাফের পাশাপাশি 3D তে ছবি দেখানোর জন্য একটি ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। মেনকার কাছে এখনও সেই মেশিনগুলি রয়েছে।

পুনশ্চ

কথিত আছে, আসামের চা বাগানের মাটির তলা থেকে দু'ফুট লম্বা দেবী মেনকার মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল। সেই থেকেই চা বাগান এবং তার পরে এই সিনেমা হলের নাম মেনকা রাখা হয়। সেই মূর্তি বাগানের ভিতরে এক মন্দিরে পূজিত হয়ে চলেছে।

আরও মেনকা ছবি