ঠিকানা: ১২২, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড, কলকাতা-৬
শুভারম্ভ: ১৫।৮।১৯৩৪
প্রদর্শিত প্রথম ছবি: ক্যাথরিন দ্য গ্রেট
এখন: চলছে
উত্তর কলকাতায় ছায়া সিনেমা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বারিকরা। কলকাতায় যাওয়ার আগে তারা মূলত বাঁকুড়ার বাসিন্দা। কলকাতায় মহেশচন্দ্র বারিকের একটি লোহার কারখানা ছিল। পরবর্তীকালে তিনি একটি তেলকল স্থাপন করেন। ব্যবসায় সাফল্য বারিক এস্টেট প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করে। দায়িত্বে ছিলেন কালিপদ বারিক। তিনি ৩২বছর বয়সে মারা যান। তাঁর স্ত্রী ছিলেন শৈলবালা দেবী। কালীপদর মৃত্যুর পর শৈলবালা ব্যবসার দায়িত্ব নেন। শৈলবালা দায়িত্ব নেওয়ার পর বারিকরা সারা কলকাতায় সম্পত্তি কেনা শুরু করে। কথিত আছে যে এক সময় এই পরিবারটি কলকাতায় প্রায় ১০০টি বাড়ির মালিক ছিল। শৈলকে তাঁর ভাই ভোলানাথ বারিক এবং পূর্ণচন্দ্র বারিক খুব সাহায্য করেছিলেন। পূর্ণচন্দ্র সিনেমার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। তিনিই শৈলবালাকে একটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করতে রাজি করান। কিন্তু এ সময়েই তাঁদের আর্থিক সংকট দেখা দেয়। অবশেষে তেলকলটি বিক্রি হয়ে যায়। আপার সার্কুলার রোডে (১২২, এপিসি রোড) পরিবারের নিজস্ব জমিতে এর পর ছায়া সিনেমাটি নির্মিত হয়। ছায়ার নামকরণ করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৯৩৪ সালের ১৫ অগস্ট এটি উদ্বোধন করেছিলেন। কেশরী ফিল্মসের বাসবদত্তা এখানে প্রদর্শিত প্রথম ছবি। নেতাজিও সেখানে এসেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছায়া প্রাঙ্গণে চণ্ডালিকা মঞ্চস্থ করেছিলেন। উদয় শঙ্কর এবং অমলা নন্দী বিয়ের আগে ছায়ায় নাচের অনুষ্ঠান করেছিলেন। সাধনা বসুও এখানে নৃত্য পরিবেশন করেছেন। ম্যাজিক শো করেছেন পি সি সরকার সিনিয়র। পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ছায়াতে মুক্তি পেয়েছিল। আরাধনা (১৯৬৯) এখানে ১১ সপ্তাহ চলেছিল। এস ডি বর্মণ ১০০তম দিনে ছায়ায় এসেছিলেন। তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জয় সন্তোষী মাতা (১৯৭৫) ১০ সপ্তাহ চলেছিল। ত্তমকুমার, বিশ্বজিৎ, ধর্মেন্দ্র, সুচিত্রা সেন-সহ অতীতের বহু তারকা ছায়ায় এসেছিলেন। এই হলে শুরুতে ড্রেস সার্কেলে ১৬টি বক্স এবং ৫১টি আসন ছিল। ব্যালকনিতে ৮৪টি আসন, পিছনের স্টলে ৫৮৬টি আসন ছিল। সামনের স্টলে ছিল ২১২টি। ১৬টি আসন বিশিষ্ট একটি মহিলা বক্সও ছিল। ছায়া এখনও তার ৯৯৩ আসন বজায় রেখেছে। বক্সগুলো আর নেই। টিকিটের দাম বর্তমানে ৫০ টাকা। হলটিতে কখনই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল না। সন্ধ্যায় সব জানলা খুলে দেওয়া হয়। তিনটি পুরনো প্রজেকশন মেশিন এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। ইন্দ্রনাথ বারিক, যিনি এখন ছায়ার দেখাশোনা করেন, বললেন, ছায়ার দর্শকের চরিত্র অনেক দিনই বদলে গেছে। এখানে এখন সেন্সর করা প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্রগুলি প্রদর্শিত হয়। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জন দর্শক চারটি শো দেখতে আসে। রবিবার সংখ্যাটা বেড়ে ৪০০ হয়। তাই দিয়েই কর্মীদের বেতন হচ্ছে।
পুনশ্চ
শৈলবালার এক পুত্র শচীন্দ্রনাথ উত্তর কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সদস্য ছিলেন। তারা অনেক জাপানি ছবি আনত। তাই ছায়ায় এক সময় অনেক জাপানি ছবি দেখানো হয়েছে। পুরনো লোকেরা মনে করতে পারেন যে, এক জন জাপানি হাইকমিশনারও ছায়ায় এসে জাপানি ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
উল্লেখযোগ্য ছবি (১৯১৭-১৯৯৯)
মা, শুভ ত্র্যহস্পর্শ, বাসবদত্তা, দেবদাসী, খাসদখল, নারী প্রগতি (ছোট), একটি কথা (ছোট), দেবযানী, দুই বন্ধু, ধাত্রীদেবতা, ঘুমিয়ে আছে গ্রাম, মায়ের ডাক, সমাপিকা, সর্বহারা, শাঁখা সিঁদুর, স্বর্ণসীতা, অনন্যা, বিষের ধোঁয়া, দ'খ্নে বাঘ, মায়াজাল, পরশ পাথর, রবীন মাষ্টার, একই গ্রামের ছেলে, কৃষাণ, মেজদিদি, রত্নদীপ, জবানবন্দী, নিরক্ষর, চিরন্তনী, পথিক, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, সরলা, শ্বশুর বাড়ী, বাঙ্লার নারী, শিবশক্তি, ডাকিনীর চর, হ্রদ, অভাগীর স্বর্গ, অসমাপ্ত, ধূলার ধরণী, সাহেব বিবি গোলাম, শুভরাত্রি, কাঁচামিঠে, এরা কারা?, প্রেমের ঠাকুর রামকৃষ্ণ, সেই সুর, উপলব্ধি, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, খোলা চোখ, প্রেম সংঘাত, পুতুলের প্রতিশোধ (ডাব্ড), অগ্নিশিখা