ঠিকানা: ১০২, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোড, কলকাতা ২৬
শুভারম্ভ: ১৯।১২।১৯৪৭
প্রদর্শিত প্রথম ছবি: মীরা
এখন: চলছে
সত্যভূষণ বসুর তত্ত্বাবধানে বসুশ্রী সিনেমার প্রতিষ্ঠা ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৭-এর ১৯ ডিসেম্বর এখানে প্রথম দেখানো হয় এম এস শুভলক্ষ্মীর মীরা। তার পরেই আসে উদয়শঙ্করের কল্পনা। সিনেমার সঙ্গে বসু পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক । বসু থেকেই বসুশ্রী নাম। কলকাতার বীণা সিনেমা, হাওড়ার কল্পনা, শান্তিুপুরের সুশ্রী, সব এঁদেরই তৈরি প্রেক্ষাগৃহ। সত্যভূষণ মাত্র তিরিশ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর ছবি-সহ একটি স্লাইড বসুশ্রীর প্রতিটি শো-এর আগে দেখানো হয়। ১৯৫৫ সালের ২৬ অগস্ট পথের পাঁচালী মুক্তি পায় বসুশ্রী, বীণা আর ছায়াতে। অপরাজিত এবং সোনার কেল্লার প্রিমিয়ারও হয়েছিল এখানেই। অযান্ত্রিক-এর মুক্তির সময় দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঋত্বিক ঘটক ছবিতে ব্যবহৃত জগদ্দল গাড়িটি বসুশ্রীর বারান্দায় তুলে দিয়েছিলেন। দেয়া নেয়া (১৯৬৩), অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি (১৯৬৭), সোনার কেল্লা (১৯৭৪) এবং বাবা তারকনাথ (১৯৭৭) খুব ভাল ব্যবসা দিয়েছিল। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সব রকম ছবিই দেখাত বসুশ্রী। মুঘল-এ-আজম (১৯৬০), পেয়ার কা মৌসম (১৯৬৯), জনি মেরা নাম (১৯৭০), দিওয়ার (১৯৭৫), মুকাদ্দার কা সিকান্দার (১৯৭৮) এবং লাওয়ারিস (১৯৮১)— বসুশ্রীতে ১০ সপ্তাহের কম চলেনি একটাও। অমিতাভ বচ্চন, প্রেম চোপড়া, রেখাকে নিয়ে দুলাল গুহ তাঁর দো আনজানে (১৯৭৬) ছবির একটা অংশের শুটিং করেছিলেন বসুশ্রীতেই। দিলীপ কুমারের দেবদাস (১৯৫৫), গঙ্গা যমুনা (১৯৬১) ছবির কলকাতা প্রিমিয়ার বসুশ্রীতেই হয়েছিল। পরের যুগেও হম দিল দে চুকে সনম (১৯৯৯) বা গদর এক প্রেম কথা (২০০১) বসুশ্রীর বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল। সত্যভূষণের প্রয়াণের পরে দীর্ঘ কয়েক দশক জুড়ে বসুশ্রীর হাল ধরেছিলেন সত্যভূষণের আরেক ভাই ইন্দুভূষণ বসুর পুত্র মন্টু বসু। তাঁর আমলে বসুশ্রী বাংলা ছবির কলাকুশলীদের একটা প্রধান আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে প্রবল জনপ্রিয় হয় পয়লা বৈশাখ সকালে বসুশ্রীর বিচিত্রানুষ্ঠান আর ডিসেম্বরে হত উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খান, পন্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ আল্লা রাখা, উস্তাদ বিলায়ত খানের মতো শিল্পী সমন্বয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর। কলকাতায় লতা মঙ্গেশকরের প্রথম গানের অনুষ্ঠান হয় বসুশ্রীতেই। ছবি বিশ্বাস, উত্তম কুমার, এস ডি বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, কিশোরকুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, জহর রায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবি ঘোষেরা ছিলেন বসুশ্রীর অনুষ্ঠানের নিয়মিত শিল্পী। ১৯৯৭ সালে বসুশ্রীতে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম চালু হয়, ২০০৭ সালে ডিজিটাল প্রোজেকশন। তবে সিঙ্গল স্ক্রিনের প্রতি দর্শকের আগ্রহ তার আগে থেকেই কমতে শুরু করেছে। ২০১৫ সালে তার মধ্যে বাহুবলী ভাল ব্যবসা করে বসুশ্রীতে। ২০১৭-তে 2K প্রোজেকশন চালু হল। কিন্তু তাতেও দর্শক সমাগম যে খুব বাড়ল তা নয়। অতিমারীর আগে ১০৩০ আসনে বসুশ্রীতে দিনে ২০০টির বেশি টিকিট বিক্রি হচ্ছিল না। কোভিড-কালে ২০২০-র ২৮শে মার্চ বসুশ্রী বন্ধ করা হল। ২০২০-২০২১ জুড়ে একাধিক বার খোলা-বন্ধের মধ্য দিয়ে গিয়েছে বসুশ্রী। ২০২২-এ টনিক, অপরাজিতর মতো ছবি কিন্তু বসুশ্রীতে ভালই ব্যবসা পেয়েছে। ফরাসি কনস্যুলেট, আলিয়ঁস ফ্রাঁসে, গোয়েথে ইনস্টিটিউট, প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট, স্যাফো-র একাধিক চলচ্চিত্র উৎসব এখানে হয়েছে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের ছবিও দেখানো হয়েছে। ২০২১-এ কোভিডের জন্য যখন বহু অনুষ্ঠান বাতিল, তখন বসুশ্রীই আর্টহাউস এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের মঞ্চ হয়ে উঠেছিল।
পুনশ্চ
১৯৪৭ সালের তৈরি একটি অ্যাশ কার্বন প্রজেক্টর এই হলে আছে। পথের পাঁচালী এটা দিয়েই দেখানো হয়েছিল। এখন বিভিন্ন প্রদর্শনীতে এটি নিয়ে যাওয়া হয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে যখন লিজিয়ন অফ অনার দেওয়া হল, সেই অনুষ্ঠানে এই প্রজেক্টর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অপুর সংসার ছবি এতেই দেখানো হয়েছিল।
উল্লেখযোগ্য ছবি (১৯১৭-১৯৯৯)
ভুলি নাই, প্রিয়তমা, সর্বহারা, দেবীচৌধুরাণী, যার যেথা ঘর, পরিবর্ত্তন, প্রতিরোধ, ইন্দিরা, পঞ্চায়েৎ, সীমান্তিক, বরযাত্রী, ৪২, নিয়তি, পলাতকা, শঙ্খবাণী, রঘু ডাকাত, রাত্রির তপস্যা, সহসা, অদৃশ্য মানুষ, চিরন্তনী, কেরাণীর জীবন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, সরলা, শ্বশুর বাড়ী, বারবেলা, বিক্রম উর্বশী, জয়দেব, মণি আর মাণিক, না, সতী বেহুলা, ডাকিনীর চর, দত্তক, কথা কও, নিষিদ্ধ ফল, পথের পাঁচালী, পথের শেষে, অপরাজিত, অসমাপ্ত, ভাদুড়ী মশাই, চলাচল, টাকা আনা পাই, কাঁচামিঠে, কড়ি ও কোমল, মধুমালতী, মাথুর, নতুন প্রভাত, পঞ্চতপা, অযান্ত্রিক, বাঘা যতীন, বৃন্দাবন লীলা, ধূমকেতু, যমালয়ে জীবন্ত মানুষ, লীলা-কঙ্ক, রাজধানী থেকে, ভ্রান্তি, দেড়শো খোকার কাণ্ড, এই ঝড় সেই ঝড় নয়, শ্রীরাধা, ঠাকুর হরিদাস, ভয়, নদের নিমাই, প্রবেশ নিষেধ, বিষকন্যা, দিল্লী থেকে কলকাতা, মেঘ, আমার দেশ (ছোট), তরণীসেন বধ, দেয়া নেয়া, কাঁটাতার, সিঁদুরে মেঘ, পতি সংশোধনী সমিতি, প্রথম প্রেম, সুবর্ণরেখা, অঙ্গীকার, এন্টনী ফিরিঙ্গী, খেয়া, গড় নাসিমপুর, পঞ্চশর, নয়া মিছিল, শপথ নিলাম, নকল সোনা, রক্ততিলক, সোনার কেল্লা, সেলাম মেমসাহেব, সম্রাট, বাবা তারকনাথ, করুণাময়ী, নিশান (ডাব্ড), আরো একজন, ঝড়, অগ্নিসংকেত, হীরের শিকল, প্রতিপক্ষ, গণশত্রু