নিবন্ধ

প্রথম পাতা > নিবন্ধ
চিত্ত বসুর 'একটি রাত' (১৯৫৬) ছবিতে মলিনা দেবী এবং গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
'নিজের লুক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকা কিনতেন মলিনা দেবী'
তারিখ : 19-May-2024

পরিস্থিতির চাপে পড়ে মাত্র আট বছর বয়সেই অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল মলিনা দেবীর।  মিনার্ভায় কিন্নরীতে সখীদের একজন হিসেবে নিজের অভিনয় জীবন শুরু করা থেকে মঞ্চ ও রুপোলি পর্দার রাণী রাসমণি হয়ে ওঠার এই যাত্রাপথে মলিনা দেবীর পাথেয় ছিল তাঁর অসামান্য অভিনয় দক্ষতা। পর্দায় ও আড়ালে ফুটে ওঠা তাঁর জীবনের হদিশ দিলেন প্রবীণ অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। 

বিএফএ এই কাজটার দায়িত্ব নিল কেন? 

বাংলা সিরিয়ালের এ যুগের দর্শকের কাছে রাণী রাসমণি চরিত্রের সঙ্গে অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায়ের মুখচ্ছবি যেন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে। অথচ রাণী রাসমণি চরিত্রকে মঞ্চ ও রুপোলি পর্দায় জনপ্রিয় করে তোলা স্বর্ণযুগের সেই অভিনেত্রীর জীবন কথা খুব কম মানুষই জানেন। অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় ছাড়া মলিনা দেবীর জীবনের সেইসব কাহিনী আর কে-ই বা ভালো ভাবে বলতে পারবেন? সেই সব স্মৃতিচারণেই কান পাতলেন মাধবী-কন্যা মিমি ভট্টাচার্য। 

লিনা দেবী - নামটা শুনলেই অজস্র স্মৃতি মনে ভিড় করে আসে। আমি ওনার সাথে নাটকের মঞ্চের পাশাপাশি শ্যুটিং ফ্লোরেও কাজ করেছি। মঞ্চ হোক বা বড়পর্দা, ওনার সাথে কাজের প্রত্যেক অভিজ্ঞতাই আমায় সমৃদ্ধ করেছে। 

ওনার জন্মকালীন নাম অবশ্য মলিনা দেবী ছিলনা। আমার যতদূর মনে পড়ে, ওনার আসল নামটি ছিল মলিনমালা। আমি ঠিক জানিনা কেন ওনাকে সিনেমাজগতে প্রবেশ করতে হয়েছিল বা কেন উনি শিশু শিল্পী হিসেবে  মিনার্ভা থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন। তবে, আমি শুনেছি যে উনি যখন প্রথম 'কিন্নরী' নাটকে সখীর পার্টে অভিনয় শুরু করেন তখন ওনার বয়স ছিল মাত্র আট বছর। ওই বয়সেই তাঁকে জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়েছিল। তখনকার দিনের নাটক অনেকসময় গভীর রাত পর্যন্ত চলত। ছোট্ট মেয়েটি অকাতরে স্থান-কাল-পাত্র ভুলে ঘুমিয়ে পড়ত এবং অন্য 'সখী'দের সঙ্গে স্টেজে যাবার সময় হলে তাঁকে ঠেলে ঘুম থেকে তুলে দেওয়া হত। 

কালী প্রসাদ ঘোষের 'রাণী রাসমণি' (১৯৫৫) ছবির পোস্টারে মলিনা দেবী

ওনার সাথে আমার যখন প্রথম সাক্ষাৎ হয় তখন আমি খুবই ছোট। ওনার সাথে 'প্রার্থনা' নামের একটি ছবিতে কাজ করবার স্মৃতি আমার মনে পড়ে। ছবি বিশ্বাস, মলিনা দেবী এবং সুপ্রিয়া দেবী প্রমুখরা এই ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন। সুপ্রিয়া দেবীর চরিত্রের ছোটবেলাটা আমি করেছিলাম। আমার বাবার ভূমিকায় ছিলেন ছবি বিশ্বাস। আমার মনে হয় ওনার সঙ্গে সেটাই আমার প্রথম ছবি ছিল। 

ওনার জীবনের সেই অধ্যায়ের ব্যাপারে আমি বিশেষ কিছু না জানলেও এটা ঠিক যে উনি ধীরে, ধীরে মঞ্চে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন। সেই সময় উনি 'জাহাঙ্গীর', 'কন্ঠহার' ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করেন। তবে, থিয়েটারে উনি বেশিদিন কাজ করেননি। বাংলা সিনেমায় আত্মপ্রকাশের জন্য অবশ্য ওনাকে ১৯৩০-সাল অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তারাকুমার ভাদুড়ির 'শ্রীকান্ত' ছিল ওনার প্রথম ছবি। এরপর, সম্ভবত উনি প্রিয়নাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দেবী চৌধুরাণী' এবং প্রফুল্ল রায়ের 'চাষার মেয়ে' ছবি দুটিতে অভিনয় করেন।

হীরেন বোসের 'মহুয়া' (১৯৩৪) ছবিতে ওনার নৃত্যের দৃশ্যের কথা আমার মনে আছে। আমি শুনেছিলাম ওনার নাচের দৃশ্যগুলির শ্যুটিং করবার জন্যই প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে এক মস্ত বাগানবাড়ি কিনে নিউ থিয়াটার্স টু শুরু করা হয়

খুব তাড়াতাড়িই নিউ থিয়েটার্সের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন মলিনা দেবী। অভিনয় ছাড়াও তাঁর অসামান্য নৃত্য নৈপুণ্য তাঁকে সমসাময়িক নায়িকাদের ছাপিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। তিনি ললিতমোহন গোস্বামী এবং খেমচাঁদ প্রকাশের কাছ থেকে নাচের তালিম নিয়েছিলেন। হীরেন বোসের 'মহুয়া' (১৯৩৪) ছবিতে ওনার নৃত্যের দৃশ্যের কথা আমার মনে আছে। আমি শুনেছিলাম ওনার নাচের দৃশ্যগুলির শ্যুটিং করবার জন্যই প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে এক মস্ত বাগানবাড়ি কিনে নিউ থিয়াটার্স টু শুরু করা হয়। 

গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মলিনা দেবী এবং জলু বড়াল

এই সূত্রে মলিনা দেবীর ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়েও বলাটা প্রয়োজন। বিখ্যাত সঙ্গীতকার রাইচাঁদ বড়ালকে সকলেই চেনেন। জলু বড়াল ছিলেন তাঁরই দাদা। মলিনা দেবীর সঙ্গে তাঁর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। মলিনা দেবী সারাটা জীবন তাঁর সঙ্গেই থেকেছেন।  নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার দিকে মলিনা দেবী যে বিশেষ যত্ন নিতেন সেকথা অনেকেরই অজানা। এটা ঠিক যে তিনি প্রথাগত শিক্ষালাভের সুযোগ পাননি। কিন্তু তিনি যখনই সুযোগ পেতেন বই পড়তেন। জলু বড়াল এই ব্যাপারে তাঁকে উৎসাহ যোগাতেন। এই একই গুণ আমি সরযূবালা দেবীর মধ্যেও লক্ষ্য করেছিলাম। ওনারা দু'জনেই বিদেশী পত্রিকা সংগ্রহ করতেন এবং সেখান থেকে দেখে নতুন কায়দায় সাজগোজ করতেন। 

আমি ওনাকে স্টেজেও অভিনয় করতে দেখেছি। শরৎচন্দ্রের 'বিপ্রদাস' অবলম্বনে শিশিরকুমার ভাদুড়ির 'শ্রীরঙ্গম' নাটকে উনি বন্দনার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন

ছোটখাটো ভূমিকা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলেও, নিজের অভিনয় দক্ষতার জোরেই তিনি সিনেমাজগতে নিজের একটা পাকা জায়গা গড়ে নিয়েছিলেন। সব ধরণের চরিত্রই তিনি সহজে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। ওনার কথা বলতে গেলেই আমার ওনার অনেক ছবির নাম মনে পড়ে যায়। 'নিষ্কৃতি' ছবিতে ওনার অভিনয় ছিল অনবদ্য। এছাড়া, 'রামের সুমতি', 'বিন্দুর ছেলে', 'বৈকুণ্ঠের উইল', 'ছোট বউ', 'মেজবৌ', 'অন্নপূর্ণার মন্দির', 'মহাকবি গিরিশচন্দ্র', 'সাত পাকে বাঁধা', 'মানময়ী গার্লস স্কুল', 'ছায়াসূর্য' এবং 'বনপলাশির পদাবলী'। 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতে ওনার অভিনয় কেই বা ভুলতে পারে? ওই ছবিতে তাঁর ও তুলসী চক্রবর্তীর অভিনয় অতুলনীয়। 

আমি ওনাকে স্টেজেও অভিনয় করতে দেখেছি। শরৎচন্দ্রের 'বিপ্রদাস' অবলম্বনে শিশিরকুমার ভাদুড়ির 'শ্রীরঙ্গম' নাটকে উনি বন্দনার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। প্রবীণা অভিনেত্রীদের সাহায্যার্থে এবং অন্যান্য সেবামূলক কাজের জন্য কানন দেবীর তৈরি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান মহিলা শিল্পী মহলের সদস্যদের আয়োজিত বিভিন্ন নাটকেও উনি অভিনয় করেছিলেন। আমরা যারা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলাম তারা নানান নাটকের আয়োজন করতাম। সেইসব নাটক করে যে টাকা উঠত তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সেবামূলক কাজকর্ম চালানো হত।

নির্মল দে পরিচালিত 'সাড়ে চুয়াত্তর' (১৯৫৩) ছবিতে মলিনা দেবী এবং তুলসী চক্রবর্তী

কিছু নাটক রবীন্দ্রসদনে মঞ্চস্থ হয়। আবার, কিছু নাটক দেখানো হয় মহাজাতি সদনে। তবে, নাটকগুলির সব শো'ই কিন্তু হাউজফুল থাকত। 'মিশর কুমারী' নাটকে মলিনা দেবীর অভিনয় আমার মনে আছে। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন সরযূবালা এবং মলিনা দেবী। বনানী চৌধুরী ছিলেন সহ-পরিচালক। মহাজাতি সদনে প্রদর্শিত এই নাটকে মলিনা দেবী সাজতেন আবন। সাধারণত, এই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যেত অহীন চৌধুরীকে (অহীন্দ্র চৌধুরী)। মলিনা দেবী পুরুষ সেজে এই চরিত্রটি করতেন এবং তাঁর দাপুটে অভিনয়ের জোরে চরিত্রটিকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলতেন তা এককথায় অসাধারণ। 


উনি আরেকটা নাটকেও অভিনয় করেন যেটা হল শরৎচন্দ্রের 'চরিত্রহীন'। সেই নাটকে উনি সাবিত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। সেইসময় ওনার ওজন কিছুটা বেড়ে গেছিল। যাতে ওনাকে পৃথুলা না মনে হয় সেই জন্য উনি জর্জেটের শাড়ি পরতেন

হেমন্ত-দা এবং পাহাড়ি সান্যালের মতন খ্যাতনামা ব্যক্তিরাও এই নাটকের একটাও শো বাদ দিতেন না। প্রত্যেকটা শো'ই হাউজফুল থাকত, বসার জায়গা পাওয়া যেতনা। পাহাড়ি সান্যাল কিন্তু তাতেও দমতেন না, উনি মঞ্চের সিঁড়িতে বসেই নাটক দেখতেন। হেমন্ত-দা দেখতেন উইংসের আড়াল থেকে। মলিনা দেবী যখন অভিনয় করতেন পাহাড়ি সান্যাল উচ্চকন্ঠে বলে উঠতেন, "আহা সখি, কী ভালই না করেছ!"

উনি আরেকটা নাটকেও অভিনয় করেন যেটা হল শরৎচন্দ্রের 'চরিত্রহীন'। সেই নাটকে উনি সাবিত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। সেইসময় ওনার ওজন কিছুটা বেড়ে গেছিল। যাতে ওনাকে পৃথুলা না মনে হয় সেই জন্য উনি জর্জেটের শাড়ি পরতেন। ম্যাক্সিম গোর্কির 'মাদার' অবলম্বনে জলু বড়ালের নাটকেও আমি ওনাকে অভিনয় করতে দেখেছি। এই নাটকটি বিভিন্ন জায়গায় ডাক পেয়েছিল এবং তিনিও এই নাট্যরূপে তাঁর অভিনয়ের জন্য বহুল প্রসংশিত হয়েছিলেন। 

অজয় করের 'শ্যামলী' (১৯৫৬) ছবিতে উত্তম কুমার এবং মলিনা দেবী

মলিনা দেবী এবং গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের  তৈরি এমজি এন্টারপ্রাইজ নামক নাট্যদলটি নিঃসন্দেহে নাট্যজগতে তাঁদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান। ওনাদের নামের আদ্যক্ষর জুড়ে দিয়ে 'এমজি' নামটি রাখা হয়। এই দলের প্রথম নাটক দু'টি ছিল 'ঠাকুর রামকৃষ্ণ' এবং 'যুগদেবতা'। 'যুগদেবতা' নাটকটিতে মলিনা দেবী রাণী রাসমণির ভূমিকায় অভিনয় করেন। গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নাটকে ছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণের ভূমিকায়। এরপরে, কালী প্রসাদ ঘোষের 'রাণী রাসমণি' (১৯৫৫) ছবিতেও মলিনা দেবী ছিলেন নামভূমিকায়।

ছবিটির দুর্দান্ত সাফল্যের পরে দু'দশক ধরে 'রাণী রাসমণি'র নাট্যরূপেও একসাথে অভিনয় করেন মলিনা দেবী এবং গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই, রাণী রাসমণির চরিত্রে আমি আজও ওনাকে ছাড়া আর কাউকে কল্পনাও করতে পারিনা।

মলিনা দেবীর ঠিক বিপরীতে আমি বেনারসী শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। স্টেজে এমনভাবে আলোর ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে উনি ভাবে বিভোর হয়ে যেই মিলিয়ে যেতেন, ঠিক তখনই দর্শকেরা আমায় দেখতে পেতেন

'রাণী রাসমণি' নাটকে আমিও একটা ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। আমি মা কালীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম তবে সাধারণত দেবী কালীর যেমন জিভ বেরিয়ে থাকে তেমনটা কিন্তু করিনি। মলিনা দেবীর ঠিক বিপরীতে আমি বেনারসী শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। স্টেজে এমনভাবে আলোর ব্যবহার করা হয়েছিল যাতে উনি ভাবে বিভোর হয়ে যেই মিলিয়ে যেতেন, ঠিক তখনই দর্শকেরা আমায় দেখতে পেতেন। আগেকার দিনে, থিয়েটারকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এমন অনেক কলা-কৌশল ব্যবহার করা হত। সেই আকর্ষণ এখনকার থিয়েটারে আর খুঁজে পাইনা। 

'রাণী রাসমণি' নাটকে কালীর ভূমিকায় অভিনয় করবার সময়ই আমি মলিনা দেবীর সাথে একটা ছবিতেও কাজ করছিলাম। তখন উনি একবার আমায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, "গুরুদাসের কী হয়েছে রে? আজকাল, দুটো-তিনটে কথার বলার পরেই ও হাতের একটা ভঙ্গি করে। আজকাল শুধু ঠাকুরের কথাই ভাবে, অন্য কোনকিছুতেই ওর যেন মন নেই।" গুরুদাস বাবু অনেক ছবিতে, এমনকি হাসির ছবিতেও কাজ করেছেন। সেখানে তাঁর ব্যবহারে কোন অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যাবেনা। কিন্তু বাস্তব জীবনে তিনি শ্রী রামকৃষ্ণের সেই সুপরিচিত হাতের বিভঙ্গটি বারংবার অনুকরণ করতেন।

চিত্ত বসুর 'মন্ত্রশক্তি' (১৯৫৪) ছবিতে অহীন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে মলিনা দেবী

কিভাবে ওনার মৃত্যু ঘটে সেটা ঠিক আমি জানিনা। আমরা যখন স্টুডিওতে 'নিষ্কৃতি' ছবিটির শ্যুটিং করছিলাম, সেই সময় ওনার মৃত্যুসংবাদ আসে। আমরা তখন ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে শ্যুটিং করছিলাম। ওটাও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা অবলম্বনে তৈরি। পঞ্চাশের দশকে পশুপতি  চট্টোপাধ্যায় প্রথমবার 'নিষ্কৃতি' অবলম্বনে ছবি করেন। বড় বৌয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন মলিনা দেবী এবং ছোট বৌয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন সন্ধ্যারানি। এরপরে, ১৯৭৭-সালের দিকে এই গল্পটি নিয়ে আবার ছবি তৈরি হয়। পরিচালক ছিলেন সুনীল বসুমল্লিক। এবার, সন্ধ্যারানি বড় বৌয়ের ভূমিকায় এবং আমি ছোট বৌয়ের ভূমিকায় অভিনয় করি। শ্যুটিং চলাকালীন মলিনা দেবীর প্রয়াণের খবর আসে। সেই খবর পেয়েই আমরা ছুটে গেছিলাম ওনার বাড়িতে। 

মলিনা দেবীর মৃত্যুর পরে 'রাণী রাসমণি' নাটকটি আর অভিনীত হয়নি। অদ্ভুতভাবে, সেই সময়ই গুরুদাস বাবু সবকিছু ছেড়ে হঠাৎই যেন কর্পূরের মতন উবে গেলেন। তাঁর কোন খোঁজখবর আর কেউ পায়নি।

লেখক পরিচিতি

ডঃ মিমি ভট্টাচার্য দমদম মতিঝিল কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপিকা। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ইতিহাস ছাড়াও নারীদের সমস্যা এবং চলচ্চিত্র বিষয়ে গভীর আগ্রহের কারণে তাঁর পিএইচডি থিসিসের বিষয়বস্তু ছিল 'বাংলা সিনেমায় নারী চরিত্রের ক্রমপরিবর্তনের ইতিবৃত্ত'। বর্তমানে তিনি ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে সিনেমায় নারীর চিত্রায়নের পরিবর্তন বিষয়ে একটি বই লিখছেন। এই বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থে এবং জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশ করা ছাড়াও তিনি ন্যাশনাল আর্কাইভের উদ্যোগে তাঁর মা এবং খ্যাতনামা অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের একটি সুশ্রাব্য জীবনী প্রস্তুতের কাজেও সহায়তা করেছেন। সম্প্রতি তিনি মৃণাল সেন,অপর্ণা সেন এবং ঋতুপর্ণ ঘোষের ফিল্মে নারীর চরিত্রায়ণ বিষয়ে মেটিরিয়াল রিকোয়ারমেন্ট প্ল্যানিং (MRP)পর্ব সম্পূর্ণ করেছেন। বহুদেশে ভ্রমণ এবং মননশীল অধ্যয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনারে তিনি বক্তা হিসেবে যোগদান করেছেন।